জীবনী : সালামা ইবন সাখার আল-বায়াদী (রা)

রচনায় : ড. মুহাম্মাদ আবদুল মাবুদ

সালামা ইবন সাখার (রা) মদীনার খাযরাজ গোত্রের সন্তান। বানূ বায়াদার সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকার কারণে তাকে বায়াদী বলা হয়। তাঁর নামের ব্যাপারে একটু মতপার্থক্য আছে। অনেকে তার নাম সালমান বলেছেন। তবে ইবন হাজার ও ইবন আবদিল বার (রহ.) প্রমুখ সীরাত বিশেষজ্ঞ ‘সালামা’ নামই অধিকতর সঠিক বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি তাঁর স্ত্রীর সাথে ‘যিহার’ (ظهر) করেন, অত:পর দৈহিকভাবে মিলিত হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে কাফফারা আদায় করার নির্দেশ দেন। [1]

উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় যিহারের দ্বিতীয় ঘটনা ছিল সালামা ইবন সাখার আল-বায়াদীর ঘটনা। তার যৌন শক্তি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু বেশী। রমযান মাস আসলে তিনি এই আশংকায় রমযানের শেষ অবধি সময়ের জন্য স্ত্রীর সাথে “যিহার” করলেন যাতে রোযা অবস্থায় দিনের বেলায় অধৈর্যের কাজ করে না বসেন। কিন্তু তিনি নিজের এ সংকল্প রক্ষা করতে পারলেন না। এক রাতে তিনি স্ত্রীর কাছে চলে যান এবং একান্তভাবে মিলিত হন। তারপর লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সব কিছু খুলে বলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন: একজন ক্রীতদাস মুক্ত করে দাও। তিনি বললেন: আমার কাছে আমার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই যাকে আমি মুক্ত করতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: একাধারে দু’মাস রোযা রাখ। তিনি বললেন: রোযা অবস্থায় অধৈর্য হয়েই তো আমি এ বিপদে পড়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তাহলে ৬০ জন মিসকীনকে আহার করাও। তিনি বললেন: আমি এত দরিদ্র যে, উপোস করে রাত কাটিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বানূ যুরাইকের যাকাত আদায়কারীর নিকট থেকে এতটা খাদ্য দিলেন যাতে তিনি তা ৬০ জন মিসকীনকে বন্টন করে দিতে পারেন এবং নিজের পরিবারের প্রয়োজন পূরণ করার জন্যও কিছু রাখতে পারেন।[2]

আরবে অনেক সময় এমন ঘটনা ঘটতো যে, স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হলে স্বামী উত্তেজিত অবস্থায় বলতো (أنت على كظهر أمي) এর আভিধানিক অর্থ হলো, ‘তুমি আমার জন্য ঠিক আমার মায়ের পিঠের মত’। কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে আমার তোমার সাথে সহবাস ঠিক আমার মায়ের সাথে সহবাস করার মত। এর স্পষ্ট অর্থ দাঁড়ায় স্বামী এখন আর তাকে স্ত্রী মনে করে না, বরং যেসব স্ত্রীলোক তার জন্য হারাম তাদের মত মনে করে। এরূপ করাকেই “যিহার” (ظهر) বলা হয়।

(ظهر) আরবী ভাষায় রূপক অর্থে বাহনকে বলা হয়। উদাহরণ স্বরূপ সওয়ারী জন্ত কে (ظهر) বলা হয়। কেননা, মানুষ তার পিঠে আরোহণ করে। মানুষ যেহেতু স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম করে নেয়ার উদ্দেশ্যে বলতো, যে, তোমাকে (ظهر) বানানো আমার জন্য আমার মাকে (ظهر) বানানোর মতই হারাম।

সুতরাং তাদের মুখ থেকে এসব কথা উচ্চারণ করাকেই তাদের ভাষায় (যিহার) বলা হতো। জাহিলী যুগে আরবদের কাছে এটা তালাক বা তার চেয়ে অত্যন্ত কঠোর প্রকৃতির সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা বলে মনে করা হতো। কারণ তাদের দৃষ্টিতে এর অর্থ ছিল এই যে, স্বামী তার স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করছে না বরং তাকে নিজের মায়ের মত হারাম করে নিচ্ছে। একারণে আরবদের মতে তালাক দেয়ার পর তা প্রত্যাহার করা যেতো। কিন্তু যিহার প্রত্যাহার করার কোন সম্ভাবনাই অবশিষ্ট থাকতো না।[3]

সালামা ইবন সাখার (রা), তাঁর দু’ কাজের জন্য ইসলামের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার একটি হলো, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাবুক যুদ্ধে যাবার জন্য তাদেরকে বাহন দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তখন যুদ্ধে যেতে না পারার দুঃখে তাদের চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে থাকে। আর সে দৃশ্য আল্লাহ তা’আলা আল-কোরআনে ধারণ করেছেন, যা সালামা ও তাঁর সঙ্গীদের মর্যাদাকে অতুলনীয় করে তুলেছে। আর অপরটি হলো “যিহার’-এর ঘটনা (ظهر) আল- কোরআনে বিধৃত হয়েছে। ঈমাম আল-বাগাবী (রহ) বলেন, একমাত্র “যিহার” (ظهر) এর হাদীসটি ছাড়া সালামা ইবন সাখর (রা) থেকে বর্ণিত আর কোন হাদীস আমার জানা নেই। এই হাদীসটি তাঁর থেকে সাঈদ ইবন আল-মুসায়্যিব, সুলায়মান ইবন ইয়াসার, আবু সালামা, সাম্মাক ইবন আবদির রাহমান ও মুহাম্মাদ ইবন আবদির রাহমান ইবন ছাওবান (রহ) বর্ণনা করেছেন।[4]

তথ্যসূত্র :

[1] আল-ইসতী’আব, (আল-ইসাবার পার্শ্বটীকা)-২/৮৮; আল-ইসাবা-২/৬৬; ‘আসরুস সাহাবা-৪৮১

[2] তাফহীমুল কোরআন; সূরা আল-মুজাদালার তাফসীর, খন্ড-১৬, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা-২০০৪; উসুদুল গাবা২/২৯৬-২৯৭

[3] তাফহীমুল কোরআন, প্রাগুক্ত।

[4] উসুদুল-গাবা২/২৯৬; আল-ইসাবা-২/৬৬; আল-ইসতী’আব-২/২৯৬

লেখাটি পুরনো মাসিক পৃথিবী থেকে সংগৃহীত।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88