প্রজাপতি

শুঁয়োপোকা সম্ভবত কখনো ভাবতে পারেনা যে একটা পাতলা আবরণে ঢাকা তার জোঁকের মত শরীরটা একদিন সেই আবরণ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে। পিঠের দিকে দুটো ডানা গজাবে। অতঃপর তার জীবনটাই যাবে বদলে। মানুষ তাকে দেখলেই ঘেন্না না করে আনন্দিত হবে। বলবে, “ঐ দেখো! প্রজাপতি!”

কিছু মানুষের জীবনটাও যেন এই শুঁয়োপোকার মত। জীবনে কখনই যা ভাবেনা, সেটাই তার জীবনকে আমূল বদলে দেয়। চেনাজানা একটা ছেলে ছিল। যার দুচোখ ভরা ছিল আকাশচুম্বি স্বপ্ন। বাস্তব স্বপ্ন, অলীক স্বপ্ন, সব মিশে একাকার। জীবনে বুঝি পাওয়ার কিছু বাকি ছিলনা ঐ সব স্বপ্নের ঘুড়িগুলো নাটাই ঘুরিয়ে বাস্তবের মাটিতে টেনে আনা ছাড়া। বেনিআসহকলা যেন তার জীবনের ধবধবে সাদা ক্যানভাসটাতে রঙের পর রঙ ঢেলে এতটুকু সাদা জায়গা বাকি রাখেনি। 

তবে সাদার অনুপস্থিতি যে কতটা প্রকট, তা একটু একটু টের পেতে লাগলো সে। সাদা কাগজ ছাড়া যে রঙ ছড়ানো যায়না! অতঃপর একটা একটা করে সে তার রঙ্গিন ক্যানভাসগুলো ছিঁড়তে লাগলো। এ রঙ তার চোখেও যে ঠেসে দিয়েছিল এক রঙ্গিন চশমা, যাতে ধবধবে সাদাকেও রঙ্গিন লাগতো, আগুনের লেলিহান শিখাকেও একই রঙ্গিন লাগতো।

শুঁয়োপোকার মত ধীরে ধীরে একটা পাতলা আবরণ যেন সে ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে। ধীরে ধীরে যেন দু কাঁধে ডানা গজিয়ে ওঠে। এ ডানা মুক্তির। এ ডানা স্বাধীনতার। এ ডানা নিজের অন্তর, সমাজ, অজ্ঞতা, অবাধ্যতা আর বিভ্রান্তির কারাগার থেকে তাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল এক মুক্তাঙ্গনে। যেখানে যেন তারই জন্যে অপেক্ষা করছিল আরো হাজারো ডানা গজানো কিছু শুভ্র ক্যানভাসের অধিকারী মানুষ। মুখে যাদের এক চিলতে হাসি, যে হাসি তৃপ্তির, যে হাসি আনন্দের, যে হাসি চারপাশে যেন ধ্বনিত হয়ে কানে বাজে – “এসো! এসো আলোর পথে!”

আর ঐ রঙ্গিন ক্যানভাসগুলো? তাকে আর ছিঁড়তে হয়নি। চোখের সামনেই সে তার ক্যানভাসগুলো তীব্র আগুনে জ্বলতে দেখেছে। পুড়ে ছাই হয়েছে।

এই আলোর পথে যাত্রা তার পরকে আপন করেছে, আপনকে করেছে পর। এই আলোর দিশা তার সমস্ত স্বপ্নকে কবর দিয়েছে, জন্ম দিয়েছে নতুন কটা স্বপ্নের। যে স্বপ্ন সবুজ পাখি হয়ে জান্নাতে উড়ে বেড়ায়। যে স্বপ্ন এক সুমিষ্ট নহরের পাশে এক ঢোঁক জল পানের অসম্ভব সুন্দর কিছু চিত্র আঁকে।

বন্ধুর, কাঁটায় ভরা এক পথে পা বাড়িয়ে ছেলেটির কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে ফেলেছে কেউ কেউ। হাত ধরে দুই কদম সাথে হেঁটে থেমেও গেছে কেউ কেউ। হয়তো বুকটা হু হু করে উঠেছে তার। হৃৎপিণ্ড অস্বাভাবিক ভাবে দৌড়েছে। হয়তো চোখজোড়া নেমেছিল সুদৃশ্য ঝরনাধারার ভূমিকায়; বহুবার।

তবু সে পদযুগল থামায় নি। পথের সাথীদের উল্টো পথে ফিরে যাওয়া নিরবেই দেখে গেছে সে। আর দেখেছে তার দু পাশের একাকীত্ব। তবে সামনে যতদূর চোখ যায়, দেখেছে এমন হাজারো একাকী পথিক, যারা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, চোখ সামনের দিকে স্থির রেখে, এগিয়ে যাচ্ছে সেই আলোর পথের দিকে। কী অদ্ভুত! কী শক্তি! কী স্পৃহা! কী বিশ্বাস!

ছেলেটিও চোখ ফিরিয়ে নেয়। সময় খুব বেশি নেই। এই কণ্টকাকীর্ণ পথে পা বাড়িয়ে অন্ধকারের সব কিছুই সে হারিয়েছে। আঁধারের দিকে চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পাওয়ার কথা নয়। আলো তো সেই সামনে। ঘড়িটাও টিক টিক চলছে; সময় বেশি নেই। ছেলেটি সামনে ফিরে আবার পা বাড়ায়। পেছনে পড়ে রয় কিছু অন্ধকার ছায়ামূর্তি।

আলোর দিকে দৃষ্টি তার। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। অজান্তেই ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে – আলহামদুলিল্লাহ!

sg15-10761

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88