কোন ব্যক্তি কখন নামায বর্জনকারী হিসেবে গণ্য হবে এবং নামায বর্জন করার হুকুম কি?

প্রশ্ন: নামায বর্জনকারী কি সম্পূর্ণভাবে অমুসলিম হিসেবে গণ্য হবে? যে ব্যক্তি দুই ঈদের নামায পড়ে, কখনও কখনও জুমার নামায পড়ে, কখনও কখনও পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কোন ওয়াক্ত পড়ে সে ব্যক্তি কি “যে মোটেই নামায পড়ে না” তার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং অমুসলিম হিসেবে গণ্য হবে? “মোটেই নামায পড়ে না” এ কথাটির ব্যাখ্যা কি?

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

আলেমদের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, অসংখ্য দলিলের ভিত্তিতে যে ব্যক্তি আদৌ নামায পড়ে না সে কাফের; নামায না পড়ার কারণ অলসতা হোক কিংবা অস্বীকার হোক। ইতিপূর্বে 5208 নং প্রশ্নোত্তরে সেসব দলিল উল্লেখ করা হয়েছে।

দুই:

যদি কোন মানুষ একেবারে সব নামায ছেড়ে না দেয়; কখনও পড়ে, কখনও পড়ে না— যেসব আলেম নামায বর্জনকারীকে কাফের বলেন, তারা এমন ব্যক্তির ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে এক ওয়াক্ত নামায বর্জন করলে এবং ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলে সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ফজরের নামায পড়ল না; এক পর্যায়ে সূর্য উঠে গেল সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে যোহরের নামায পড়ল না; এক পর্যায়ে সূর্য ডুবে গেল সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে। কেননা যোহরের নামায আসরের নামাযের সাথে একত্রে আদায় করা যায়। তাই ওজরের ক্ষেত্রে এ দুই ওয়াক্ত নামাযের ওয়াক্ত এক। একই কথা মাগরিব ও এশার নামাযের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মাগরিবের নামায বর্জন করবে এশার ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলে সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে।

আর কারো কারো অভিমত হচ্ছে, নামায সবসময় বর্জন না করলে কাফের হবে না।

ইমাম মুহাম্মদ বিন নাসর আল-মারওয়াযি (রহঃ) বলেন: “আমি ইসহাককে বলতে শুনেছি: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ সনদে হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে যে, নামায বর্জনকারী কাফের। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানা থেকে আজ পর্যন্ত আলেমদের মতামত হচ্ছে- যে ব্যক্তি কোন ওজর ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করে; এক পর্যায়ে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায় সে ব্যক্তি কাফের। ওয়াক্ত শেষ হবে যোহরকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিলম্ব করার মাধ্যমে এবং মাগরিবকে ফজরের ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্ব করার মাধ্যমে।

আমরা নামাযের শেষ ওয়াক্তকে এভাবে উল্লেখ করলাম কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার ময়দানে, মুযদালিফার মাঠে ও সফর অবস্থায় দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে আদায় করেছেন। এক ওয়াক্তের নামায অন্য ওয়াক্তে আদায় করেছেন। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক প্রেক্ষাপটে পরের ওয়াক্তের নামাযকে প্রথম ওয়াক্তে আদায় করেছেন এবং প্রথম ওয়াক্তের নামাযকে পরের ওয়াক্তে আদায় করেছেন এর থেকে জানা গেল যে, ওজরের ক্ষেত্রে এ দুই নামাযের ওয়াক্ত অভিন্ন। যেমনিভাবে কোন ঋতুবতী নারী যখন সূর্য ডোবার পূর্বে হায়েয থেকে পবিত্র হয় তখন তাকে যোহর ও আসর দুই ওয়াক্ত নামায আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়। যদি শেষ রাতে পবিত্র হয় তাহলে তাকে মাগরিব ও এশা দুই ওয়াক্তের নামায আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়।[তাযিমু কাদরিস সালাম ২/৯২৯ থেকে সমাপ্ত]

ইবনে হাজম বলেন: “আমাদের কাছে উমর বিন খাত্তাব (রাঃ), মুয়াজ বিন জাবাল (রাঃ), ইবনে মাসউদ (রাঃ) সহ একদল সাহাবী থেকে এবং ইবনুল মুবারক, আহমাদ বিন হাম্বল, ইসহাক বিন রাহুইয়া এবং ঠিক ১৭ জন সাহাবী থেকে এই মর্মে বর্ণনা এসেছে যে, মনে থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয নামায বর্জনকারী কাফের ও মুরতাদ। এ অভিমত পোষণ করেন, ইমাম মালেকের শিষ্য আব্দুল্লাহ বিন মাজিশুন। এ মত ব্যক্ত করেন, আব্দুল মালিক বিন হাবিব আল-আন্দালুসি প্রমুখ।”[আল-ফাসলু ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহাল ৩/১২৮]

তিনি আরও বলেন: “উমর (রাঃ), আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ), মুয়াজ বিন জাবাল (রাঃ), আবু হুরায়রা (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবীর মত বর্ণিত আছে যে, “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে এক ওয়াক্ত ফরয নামায ত্যাগ করে, এক পর্যায়ে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায় সে ব্যক্তি কাফের ও মুরতাদ”[মুহাল্লা ২/১৫ থেকে সমাপ্ত]

শাইখ বিন বাযের নেতৃত্বাধীন ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি এই অভিমতের পক্ষে ফতোয়া দিয়েছেন।[ফাতাওয়াল লাজনা আদ-দায়িমা ৬/৪০,৫০]

পক্ষান্তরে, শাইখ উছাইমীন ফতোয়া দিয়েছেন, সব সময় নামায ছেড়ে দিলে কাফের হবে; অনথ্যায় নয়। শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে ব্যক্তি মাঝে মাঝে নামায পড়ে এবং মাঝে মাঝে ছেড়ে দেয় সে ব্যক্তি কি কাফের হয়ে যাবে?

জবাবে তিনি বলেন: আমার কাছে অগ্রগণ্য মত হচ্ছে- সে ব্যক্তি কাফের হবে না। তবে সে যদি সম্পূর্ণরূপে নামায ছেড়ে দেয়; কখনও নামায না পড়ে তাহলে কাফের হবে। কখনও কখনও নামায পড়লে সে ব্যক্তি কাফের হবে না। এর দলিল হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “মুমিন ব্যক্তি এবং শির্‌ক-কুফরের মাঝে পার্থক্য নির্ধারণকারী কাজ হচ্ছে- নামায বর্জন”। এ হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেননি যে, এক ওয়াক্তের নামায বর্জন। বরং বলেছেন, নামায বর্জন। তাই এ বাণীর দাবী হচ্ছে- সাধারণভাবে নামায বর্জন। যেহেতু তিনি আরও বলেছেন: “আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মধ্যে চুক্তি হলো নামাযের। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করল, সে কুফরি করল।” এর ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি: যে ব্যক্তি কখনও কখনও নামায পড়ে, আর কখনও কখনও নামায ছেড়ে দেয় সে কাফের নয়।[মাজমু ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন ১২/৫৫]

কিন্তু, শাইখকে যখন এমন ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় যে শুধু জুমার নামায পড়ে?

জবাবে তিনি বলেন: জুমা ছাড়া অন্য কোন নামায পড়ে না? কেন সে জুমা ছাড়া অন্য কোন নামায পড়ে না?

প্রশ্নকারী: তার অভ্যাস।

জবাব: অভ্যাস! এমন হলে, এ ব্যক্তির নামায ইবাদত— আমি এটা বিশ্বাস করতে পারি না। তাইতো সে অভ্যাসগতভাবে জুমার নামায পড়ে। পোশাকাদি পরে, সেজেগুজে, আতর মেখে চলে যায়। যদিও আমি মনে করি, কেউ সম্পূর্ণভাবে নামায ছেড়ে না দিলে কাফের হবে না; কিন্তু আমি এই লোকের ইসলামের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করি। কেননা এই লোক জুমার নামাযকে শুধু ঈদ হিসেবে গ্রহণ করেছে। সাজগোজ করে। আতর মেখে, সজ্জিত হয়ে সে মানুষের জন্য জুমাতে যায়। এমন ব্যক্তি ইসলামে অবিচল থাকার ব্যাপারে আমি সন্দেহ করি। তবে, আমাদের শাইখ আব্দুল আযিয এর দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে- সে কাফের এবং এটাই চূড়ান্ত[লিকাউল বাব আল-মাফতুহ]

আল্লাহই ভাল জানেন।

তথ্যসুত্রঃ

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member