আল্লাহর নেআমত অসীম ও অগণিত

মাসজিদে নববীর খুতবা

বিষয়: আল্লাহর নেআমত অসীম ও অগণিত।

খুতবা প্রদানে : শাইখ আলী ইবনে আবদুর রাহমান আল হুযাইফী

তারিখ: ২৯-৭-১৪২৪ হিজরী।

সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা আল্লাহর জন্য যিনি মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। আমি আমার রবের প্রশংসা করছি, তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, তার কাছে প্রত্যাবর্তন করছি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছারা প্রকৃত কোন মাবূদ নেই, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল।

হে আল্লাহর বান্দাহগণ! প্রকাশ্য ও আপ্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা আল্লাহ ভীতিই হচ্ছে তোমাদের সর্বোত্তম আমল এবং সর্বোৎকৃষ্ট উপার্জন।

হে মুসলমানগণ ! তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর অগুনত প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেআমতের কথা স্মরণ কর। এবং আল্লাহর নেআমতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 وَإِن تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا ۗ إِنَّ اللَّهَ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

“আর যদি তোমরা আল্লাহর নেআমত গননা করতে থাক তা গননা করে শেষ করত পারবে না নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল ও করুনাময়”। [সুরা আন নাহাল -১৮]

সত্যিই মানুষের পক্ষে কি সম্ভব তার শ্বাস প্রশ্বাস, চোখের পলক ইত্যাদি গননা করে শেষ করা?! না কখনো তারা সক্ষম হবে না। অথচ আল্লাহর নেআমত সমূহ এর চেয়েও অনেক অনেক বেশি বরং সৃষ্টি জগতের উপর অফুরন্ত নেআমতের সামান্য অংশ।

হে লোক সকল! আল্লাহ তা’আলা অফুরন্ত অনুগ্রহ ও নেআমতের মাধমে তোমাদের ধন্য করেছেন। আর বিশেষ করে আমাদের এ দেশের উপর তাঁর অফুরন্ত নেআমত এমনভাবে দিয়েছেন যা তোমরা কখনো গননা করে শেষ করতে পারবে না। এর কৃতজ্ঞতা আদায় করাতো দুরের কথা। তিনি আমাদের উপর এমন বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন যার শুকরিয়া প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে আদায় করা আমাদের উপর অপরিহার্য। আল্লাহর অফুরন্ত নেআমতের একটি হচ্ছে তিনি আমাদের এ দেশকে বিভিন্ন দলা-দলি, চিন্তা চেতনা ও বিপরীতমুখী মতবাদ থেকে মুক্ত করেছেন কেননা আমাদের জনগনের দ্বীন হচ্ছে এই রাজতন্ত্রে ইসলাম। যে ইসলাম ফেরকাবন্দী, দলাদলি ও হরেকরকম প্রবৃত্তির দিকে আহবানকে হারাম করেছে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

“তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সম্মিলিতভাবে আকড়ে ধর আর পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না এবং স্মরণ কর তোমাদের উপর আল্লাহর নেআমতকে যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে এরপর তিনি তোমরাদের মাঝে ভালবাসা সৃষ্টি করে দিলেন ফলে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভাই ভাই হয়ে গেলেন”। [সুরা আল ইমরান -১০৩]

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,

 إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ ۚ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ

“নিশ্চয়ই যারা তাদের দ্বীনকে বিভিন্নভাবে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়ে পরেছে তাদের সাথে কোন ব্যপারে আপনার কোন সম্পর্ক নেই”। [সুরা আল আনআম -১৫৯]

ইসলাম হচ্ছে সত্য দ্বীন আর এ হক বা সত্য মানুষকে সম্মিলিত করতে সহায়তা করে বিচ্ছিন্ন করে না, ইনসাফ করে জুলুম করে না, সংশোধন করে বিপর্যয় সৃষ্টি করে না। দয়া ও অনুগ্রহ করে কঠোরতা করে না। সুতরাং মুসলমানের সম্পর্কই হচ্ছে এই হক বা সত্যের জন্য এবং যারা এ সত্য প্রতিষ্টা করে এবং পৃথিবীতে এ সত্যকে বাস্তবায়নের জন্য সকল প্রকার প্রতিরোধ গড়ে তুলে মুসলমানদের সম্পর্ক তাদের সাথে। এ কথা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এক জন মুসলমানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সার্বিকভাবে ইসলামের সাহায্য করা, ইসলামী শরীয়ত বা বিধান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শাসক গোষ্ঠীকে বাধ্যতামূলকভাবে সহায়তা করা এবং ইসলামের পক্ষথেকে সার্বিকভাবে পতিরোধ করা। সুতরাং মুসলমানদের মাঝে এ ব্যপারে যদি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয় তাহলে আমাদের এ দেশে বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত হওয়ার কোন অবকাশ নেই। কেননা বিভিন্ন দলের বিভিন্ন মত ও চিন্তা চেতনা রয়েছে আর বিভিন্ন চিন্তা চেতনা মুসলিম উম্মাহকে দুর্বল করে দেয়। এমনিভাবে প্রজাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে শাসকের চিন্তাকে অন্যদিকে ফিরিয়ে দেয়। মুসলমানদের তখন অবস্থা উত্তম হবে যখন তাদের অন্তরে দ্বীনের প্রভাব ও বাস্তবায়ন ক্ষমতা শক্তিশালী হবে পাশাপাশি তাদের শাসকবর্গ দ্বীন বাস্ত বায়নের ক্ষেত্রে শক্তিশালী হবে, অনুরূপভাবে যখন কোন কোন মানুষের অন্তরে দ্বীনের প্রভাব দুর্বলও হয় যদি শাসক শক্তিশালী হয় তাহলে তা কেটে উঠা সম্ভব হয় এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের মূলোৎপাটন করা সম্ভব হয়। আমাদের এ দেশের শাসকরা এবং তাদের নবাবরা আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহর অনুগ্রহে এ ব্যাপারে শক্তিশালী। আমরা আমাদের জনসাধারণ ও নেতৃবর্গের সুসম্পর্কের মাধ্যমে হকের উপর একত্রিত হওয়া, পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করা বিচ্ছিন্নতা ও মতবিরোধ পরিহার করা সহ যা কিছু ইসলামী জীবন ব্যবস্থা আমাদের উপর অপরিহার্য করেছে তা পালন করে থাকি। আমরা মুহাজির ও আনসার এবং যারা তাদের সুন্দরতম অনুসরণ করেছে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ যাদের প্রশংসা করেছেন তাদের আকিদা বিশ্বাসের উপর রয়েছি। আল্লাহ তা’লা কুরআনে কারীমের মধ্যে বলেন ,

 وَالَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوا وَّنَصَرُوا أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا ۚ لَّهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ

“আর যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে আর যারা আশ্রয় দিয়েছে এবং সাহায্য করেছে তারাই হচ্ছে প্রকৃত ঈমানদার। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক।” [সুরা আল আনফাল -৭৪]

আমরা আল্লাহ তা’আলা প্রশংসা করছি যিনি আমাদেরকে মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন কেননা ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর বান্দাহদের উপর সবচেয়ে বড় নেআমত।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছি এবং তোমাদের উপর আমার নেআমতকে পূর্ণতা দান করেছি”। [সুরা আল মায়েদা -৩]

ইসলাম মুসলমানের উপর জুলুম সীমালঙ্ঘনকে হারাম করে দিয়েছেন এমন কি অমুসলমানদের জন্যও এবং তাকে ইনসাফ, ইহসান, দয়া ও মানবতার কল্যাণ কামিতার নির্দেশ দিয়েছে। আর মানুষের কল্যাণ কামনার অন্তর্গত হচ্ছে তাকে প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে তাকে আল্লাহর দিকে আহবান করা এবং সত্যকে সাহায্য করনার্থে বৈধ প্রক্রিয়ায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করা। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ

“আপনি আপনার প্রভুর পথের দিকে আহবান করুন প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন সবোত্তম পন্থায় নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালককে তার পথ হতে বিভ্রান্ত তার সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত এবং কারা হেদায়াত প্রাপ্ত তাদের সম্পর্কেও সর্বাধিক জ্ঞাত”। [সুরা আন নাহাল -১২৫]

ইসলাম একজন মুসলমানের কাছে তার জীবন, পরিবার পরিজন, সম্পদ সবকিছুর চেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন। মুসলমান কখনো কখনো সম্পদ হারাতে পারে, মর্যাদা হারাতে পারে, বিশাল বিপদের মুখোমুখি হতে পারে কিন্তু যখন তার দ্বীন রক্ষা পায় তখন সে সফল হয়ে থাকে। মুসআব ইবনে উমাইর (রা:) সর্বপ্রথম হিজরকারী যাকে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসলামের দিকে আহবান করার জন্য এবং কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য মাদীনায় প্রেরণ করেছেন তিনি ছিলেন একজন ধনবান বিলাসবহুল জীবনের অধিকারী যুবক। যখন ইসলাম গ্রহন করেন তার মা তাকে সমস্ত সম্পদ থেকে ত্যাজ্য করে। তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখলেন এমন অবস্থায় যে তার দেহের রং বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে, ছিড়া বস্ত্র পরিধান করে আছেন। তার এ দুঃখ কষ্ট দেখে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চক্ষু অশ্রু বিসর্জন করল এতদ সত্ত্বেও তিনি ঈমানের মাধ্যমে সম্পদশালী ছিলেন, উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরন করেন। এ দেশের অন্যতম আর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মুসলমানদের কেবলাহ ও তাদের প্রাণের স্পন্দন পবিত্র আল্লাহর ঘর। যাকে আল্লাহ তা’আলা মানুষের স্বার্থ ও কল্যাণ সাধনের জন্য বিশেষ উপায় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 جَعَلَ اللَّهُ الْكَعْبَةَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ قِيَامًا لِّلنَّاسِ 

“পবিত্র গৃহ কাবাকে আল্লাহ মানুষের সুদৃঢ় থাকার উপায় নির্ধারণ করেছেন।” [সুরা আলা মায়েদাহ -৯৭]

তাফসীর বিশারদগণ বলেন আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবাহ তাদের জীবন যাত্রা ও দ্বীনের জন্য প্রাণকেন্দ্র যাতে তারা নিজেদের দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণের জন্য যা করা দরকার তা করতে পারে। এতে তাদের সন্ত্রস্ত ব্যক্তি নিরাপত্তা লাভ করে, দুর্বল ব্যক্তি সাহায্য লাভ করে, ব্যবসায়ী লাভবান হয়, ইবাদাতকারী তার ইবাদাত পালন করতে পারে।

এ দেশের আর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাসজিদ। যা নবীদের সর্বশেষ মাসজিদ। যাতে নামায পড়াকে আল্লাহ তা’আলা এক হাজার গুণে বর্ধিত করেছেন। এ পবিত্র মাদীনার মাটিতে রয়েছে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কবর, তিনি ছাড়া আর কোন নবীর কবরের নির্দিষ্টভাবে পরিচয় নেই।

এ দেশের আর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শরিয়া কোর্ট যাতে মানুষের সম্পদ, জীবন, ইযযত, ফৌজদারীসহ সকল প্রকার মামলার শরিয়তের বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করা হয়ে থাকে। এ সব আদালতে বাদশাহ হতে শুরু করে সবাই সমান।

আল্লাহ তাআলা এ দেশের উপর যে সব অনুগ্রহ করেছেন তার অন্যতম একটি হচ্ছে এ দেশের স্থিতিশীল নিরাপত্তা। এ দেশে মানুষ নিজেদের জীবন, সম্পদ ও পার্থিব এবং ধর্মীয় সকল প্রকার সুযোগ সুবিদার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা লাভ করে যাচ্ছে। যার কারণে বর্তমান বিশ্বে এ দেশ নিরাপত্তার জন্য উদাহরণে পরিণত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ পৃথিবীর সকল দেশের উপর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত অর্জন করেছে। সম্প্রতি কালে আমাদের এ দেশে যে সব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটেছে এ সব মূলত বহিরাগত বিকৃত ও ক্ষতিকর চিন্তা চেতনার ফল। আমাদের দেশের আলেমরা ও শাসকবর্গ কঠোরভাবে এ সব কাফের সাব্যস্তকারী চিন্তা চেতনাকে প্রতিরোধ করেছে। এ সব চিন্তা চেতনা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির উপরও আক্রমণ করেছে তবে তা সফল হতে পারেনি। আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি ও কারিকুলাম যোগ্য লোক তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে যারা তাদের দ্বীন ও দেশের খেদমত করে যাচ্ছে, মানবতার জন্য কল্যাণ কামনা করছে। তবে সব সিস্টেমেই কিছু না কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে এ ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে সকল আত্মা যা করে তার পরিণতি তার উপরই বর্তাবে, কোন বোঝা বহনকারী আত্মা অন্যের বোঝা বহন করবে না। এ বিভ্রান্ত দলের অপচেষ্টা আমাদের দেশের নিরাপত্তার উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এটা শুধু পানির বুদবুদের মত কিছুতেই টিকবেনা।

আল্লাহ তাআলা এ দেশের উপর যে সব অনুগ্রহ করেছেন তার অন্যতম আরেকটি হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। যার মাধ্যমে সকল পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে, জীবন যাত্রা উন্নত হয়ে থাকে, বসতি ও উন্নয়নের কাজ বৃদ্ধি হয়ে থাকে, সংস্কার ও জাগরণ ব্যাপকতর হয়, দ্বীন বা ইসলাম মযবুত হয়, ফেৎনা ও বিপর্যয় নির্বাপিত হয়।

আল্লাহ তাআলা এ দেশের উপর যে সব অনুগ্রহ করেছেন তার অন্যতম আরেকটি হচ্ছে আমাদের দেশে মানবাধিকার ইসলামী বিধানের ছায়াতলে সংরক্ষিত। এদেশের দুশমনরা এ দেশের নারীর অধিকার সম্পর্কে কথা বলে থাকে। তারা শরিয়তের বিধান প্রতিষ্ঠার উপর আপত্তি করে থাকে এ ধারণা করে যে, এ সব মানবাধিকার বিরোধী। কতইন নিকৃষ্ট তাদের এ কথা এবং কতই হীন তাদের উদ্দেশ্য।

নারী আমাদের এ দেশে – মা হোক, বোন হোক, কন্যা হোক, ফুফি হোক, অথবা স্ত্রী হোক সকল নিকটাত্মীয় হতে তার অপরিহার্য হক বা অধিকার পাবেই এতে কোন ধরনের ভুল নেই। সবাই তার এ হক, স্বেচ্ছায়, হৃষ্টচিত্তে এবং ইসলামের দাবী অনুসারে আদায় করে দেয়। স্বামী তার স্ত্রীর হক আদায় করে দেয় যাতে তাকে অন্য লোকের কাছে মুখাপেক্ষী হতে না হয়, নারী আমাদের এ দেশে তার নাগরিক অধিকার স্বাধীন ভাবে লাভ করে থাকে, তার জীবন যাত্রা অত্যন্ত সম্মানজনক হয় তার সামনে এমন কিছু চাকুরি ও কর্মস্থল রয়েছে যা তার সৃষ্টিগত কাঠামো ও স্বভাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আর যার প্রস্তুতি ও কর্মব্যস্ততা তার দ্বীন ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। নারী আমাদের সমাজ ও পরিবারে আহত প্রজন্মকে লালন পালন সহ তার শিক্ষা ও গঠনের যে ভূমিকা পালন করে থাকে তা কখনো খাদেম, সেবক, নার্স ও অন্য কোন লোকের পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়।

নারীদের অবস্থা আমাদের এ দেশে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক উত্তম। নারীর অধিকার লংঘন ও বিনষ্টের ব্যাপারে এ দেশের দুশমনরা যা কিছু বলে থাকে তার প্রকৃত টার্গেট হচ্ছে নারীকে তার ধর্মীয় মূল্যবোধ হতে বের করে নেয়া, তার ইসলামী চরিত্র বিনষ্ট করে দেয়া, এবং যত্র তত্র মূল্যহীন দ্রব্যের মত তাকে লাঞ্ছিতা ও বঞ্চিত করা। নারী আমাদের সমাজে যতই বৃদ্ধ হোক না কেন তার সম্মান, মর্যাদা ও তার প্রতি করুণা বেড়ে যায়। পক্ষান্তরে যারা নারী স্বাধীনতার দিকে আহবান করে নারী তাদের সমাজে সম্মানহীনা ও লাঞ্ছিতা নয় কি? সে তাদের সমাজে যা নেয় তার চেয়ে অনেক বেশী দেয় না কি? বিয়ের বয়স হলে তারা কি তাকে ঘর হতে বের করে দেয় না? কাজেই তাদেরকে জীবন সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেয় এবং মানব রূপী নেকড়েদের কাছে সোপর্দ করতে হয় জীবনকে। ফলে নারী মানসিকতা হারা হয়ে কুকুর ইত্যাদি লালন পালনের দিকে আশ্রয় নেয়। যখন তাদের সমাজকে কিছু দিতে অক্ষম হয়ে যায় তখন তারা তাকে বয়স্ক কারাগারে ঠেলে দেয় এতে সে থেকেও না থাকার মত, বেচেও না বাচার মত হয়ে যায় এটাই কি নারীর অধিকার তাদের ভাষায়? কাজেই মনে রাখা দরকার যার ঘর কাচের গ্রাসের তৈরী সে যেন মানুষদেরকে পাথর না মারে।

এ মামলাতে ফৌজদারী দন্ডবিধির যে বাস্তবায়ন যেমন চোরের হাত কাটা এ সম্পর্কে তারা যা বলে থাকে তার মূল কথা হচ্ছে এটা আল্লাহর নির্দেশ, আল্লাহ বলেন,

 وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

“আর চোর নর ও নারীর হাত কেটে দাও তারা যা করেছে তার পরিবর্তে আল্লাহর পক্ষ হতে শাস্তি স্বরূপ আর আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আল মায়েদাহ- ৩৮]

এসব মহা দয়ালু আল্লাহ তা’আলাই প্রবর্তন করেছেন। হাদীসে এসেছে “আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি গুলো হতে যে কোন একটি শাস্তি বাস্তবায়ন করা চল্লিশ দিন প্রভাতে বৃষ্টি হওয়ার চেয়েও অনেক উত্তম।”

তাই যারা অপরাধী ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের জন্য মায়া কান্না করে যাচ্ছে তারা কেন নিরপরাধ শান্তিপ্রিয় মানুষ যাদের জীবন ও সম্পদ লুষ্ঠিত যারা নিরাপত্তা হতে বঞ্চিত তাদের জন্য চিন্তা করছে না। একটি শাস্তি বাস্তবায়ন মূলত মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অপপ্রয়াস হতে রক্ষা করতে সক্ষম। তাই আল্লাহ যে বিধান দিয়েছেন তাতে পৃথিবীর সংশোধন নিহিত, এতে মানবাধিকার বিনষ্টের নামও নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,

 وَأَنِ احْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَن بَعْضِ مَا أَنزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ فَإِن تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ أَن يُصِيبَهُم بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ ۗ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ لَفَاسِقُونَ

أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ

“আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা অনুসারে আপনি বিচার করুন, আর আপনি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না, এবং আল্লাহ যা আপনার কাছে নাযিল করেছে তার ব্যাপারে তারা আপনাকে বিপর্যস্ত করা হতে আপনি সতর্ক থাকুন। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে নিন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের গুনাহর কিছু শাস্তি দিতেই চেয়েছেন। নিশ্চয়ই অনেক মানুষ পাপাচারী বা অবাধ্য তারা কি জাহেলিয়াতের বিধান কামনা করে? আল্লাহর চেয়ে দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য উত্তম বিধান দানকারী আর কে আছে?” [সূরা আল মায়েদাহ -৪৯,৫০]

হে মানুষ সকল ! আল্লাহর অপরিসীম নেআমত তোমাদের এবং আমাদের উপর রয়েছে কাজেই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আর তার শোকরিয়া হচ্ছে তার তাকওয়া অবলম্বন ও দ্বীনের উপর অবিচল থাকার মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন,

 وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ

“আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দিব”। [সূরা ইবরাহীম-৭]

এ সব নেআমতের শোকরিয়া করা অর্থ হচ্ছে আমরা গতকালের চেয়ে আজকে আরও ভালো অবস্থায় থাকা, আজকের চেয়ে আগামী কাল আরও ভালো অবস্থায় উন্নীত হওয়া। কেননা আল্লাহ তাআলা কুরআনের প্রথম সূরাতে আমাদেরকে তাকওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আবার সর্বশেষ আয়াতেও তাকওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, এমনিভাবে কুরআনের অনেক আয়াতে এ নির্দেশ দিয়েছেন যাতে করে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করতে পারি। আল্লাহ বলেন, “আর উত্তম পরিণতি হচ্ছে মুত্তাকীদের জন্য”। [সূরা আল কাসাস-৮৩]

ইসলাম, ইসলামী শিক্ষা এবং আমাদের সামাজিক চিরাচরিত নিয়মনীতি টার্গেট করে যত চ্যালেঞ্জ আসুক এর মোকাবেলায় আমাদের দ্বীন আমাদেরকে শাসকদের সাথে একদেহ একমন হয়ে সারিবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়। বরং এ দেশের জন্য গোটা পৃথিবীর সকল মুসলমানের উপর সহযোগিতা করার হক রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

  وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

“তোমরা পুণ্য ও তাকওয়ার ভিত্তিতে পরস্পর সহযোগিতা কর, আর পাপকর্ম ও সীমা লঙ্ঘনের উপর পরস্পর সহযোগিতা করো না এবং আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তি দানকারী।” [সূরা আল মায়েদাহ-২]।

আল্লাহ বলেন,

 وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ۚ وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

“আর তোমরা তাদের মত হয়োনা যারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও মতবিরোধ করেছে আর তাদের জন্য নির্ধারিত আছে মহাশাস্তি”। [সূরা আলে ইমরান-১০৫]

আল্লাহ বলেন,

وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ۖ ثُمَّ تُوَفَّىٰ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

“আর সেদিন কে ভয় কর যে দিন তোমরা আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে তারপর প্রত্যেককে সে যা করেছে তার পাওনা ফুরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদের উপর অত্যাচার করা হবে না”। [সূরা আল বাকারাহ- ২৮১]

হে আল্লাহর বান্দাহগণ! বান্দাহ যতই নেক কাজ করুক, যতই হারাম হতে দূরে থাকুক সে আল্লাহর নেআমতের শোকরিয়া আদায় করতে সক্ষম হবে না। কিন্তু বান্দার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার উপর আল্লাহর নেআমত সম্পর্কে জানবে ও বুঝবে এবং ইখলাস ও সুন্নাতের অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্যের প্রচেষ্টা করে যাবে। শোকরিয়া করার অন্যতম দিক হচ্ছে নেআমত সম্পর্কে বর্ণনা করা বা মুখে বলা। আল্লাহ বলেন, “আর আপনার রবের নেআমত সম্পর্কে বলুন”। [ সূরা আদ দোহা – ১১]

নেআমত দান কারীর ভালোবাসার মাধ্যমেও শোকরিয়া করা হয়ে থাকে। কাজ, নেক আমল, অতিরিক্ত আনুগত্য ও নেআমতকে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে ব্যবহার করার মাধ্যমেও আল্লাহর শোকরিয়া করা হয়ে থাকে। আল্লাহ বলেন, “হে দাউদ পরিবার শোকরিয়া নিমিত্তে কাজ কর আর আমার শোকরগুজার বান্দাহ তো কম”। [সূরা সাবা- ১৩]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা (রাঃ) কে বলেন, “হে আয়েশা আমি কি শোকরগুজার বান্দাহ হব না?

হে আল্লাহর বান্দাহরা! কবরে বসবাস করার আগেই নিজেদের হিসাব নিজেরা করে নাও। কঠিন শাস্তি হতে যা তোমাদের রক্ষা করতে পারে এমন নেক কাজ নিজেদের জন্য অগ্রিম পেশ কর। আল্লাহ বলেন, “এবং কিয়ামতে ব্যাপার তো চোখের পলকের মত বরং এর চেয়েও নিকটবর্তী. সূরা আন নাহাল – ৭৭]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88