নও মুসলিম অধ্যাপক গ্রে কার্ল লিগেন হাউজেন

সৃষ্টিকর্তাকে জানা ও তার উপাসনা করা মানুষের জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় দিক। ঐশী ধর্মগুলোর আবির্ভাবের পর মানব সমাজ বিশ্ব সৃষ্টির অনেক অজানা রহস্য সম্পর্কে জানার পাশাপাশি তাদের দায়িত্ব-কর্তব্যের বিষয়েও সচেতন হয়ে ওঠে।

ইসলাম শব্দের অর্থ হচ্ছে আত্মসমর্পণ। পবিত্র কুরআন শরীফ মানুষের সৌভাগ্য অর্জন এবং সঠিক পথে চলার গাইড লাইন। সর্বশেষ ধর্ম হিসেবে আল্লাহ ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে পৃথিবীতে ইসলাম এলেও সত্যসন্ধানী মানুষ এখনও নানা কারণে এ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।

অধ্যাপক গ্রে কার্ল লিগেনহাউজেন  ১৯৫৩ সালে আমেরিকার একটি ক্যাথলিক খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই জীবন সম্পর্কে তার জানার অনেক আগ্রহ ছিল। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার মধ্যে সৃষ্টিকর্তা এবং ঐশী ধর্মগুলোর ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর আমি কখনই খুঁজে পাইনি। আমি যাকেই এসব প্রশ্ন করেছি সেই বলেছে, এখন মনে মনে বিশ্বাস রাখ, এরপর বড় হলে এর উত্তর বা কারণগুলো বুঝতে পারবে। কিন্তু বিষ্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বড় হয়েও এসব প্রশ্নের কেন উত্তর আমি পাইনি।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মাসিহ্‌ বা ঈসা (আ.) আল্লাহর পুত্র’-এ বিশ্বাস খ্রিস্টান সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কিন্তু ইঞ্জিল শরীফের কোথাও আমি ঈসা (আ.) সম্পর্কে এ ধরনের কোনো উক্তি পাইনি। এ বিষয়ে আমি গির্জার পাদ্রীদের কাছে প্রশ্ন করলে তারা উত্তর দিলেন, “এটা ঠিক যে, ইঞ্জিলে ঈসা (আ.)-এর আল্লাহর পুত্র হওয়ার ব্যাপারে কোনো বক্তব্য নেই; তবে ঈসার কথাবার্তা থেকে বুঝে নিতে হবে যে তিনিই আল্লাহর পুত্র”। কিন্তু পাদ্রীদের এ জবাবে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। তাই ধর্মের ব্যাপারে এক ধরনের অবিশ্বাস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করি।

নও মুসলিম লিগেন হাউজেন  যখন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন তখন খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি তার বিশ্বাস পুরোপুরি উঠে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি যখন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন তখন সেখানে বেশ ক’জন মুসলিম ছাত্রের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। ওই পরিচয় তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং তিনি যেন নতুন জীবন ফিরে পান।

এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, পড়ালেখা শেষ করে আমি দক্ষিণ টেক্সাসের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করি এবং সেখানে বেশ ক’জন মুসলিম ছাত্রের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওইসব ছাত্র ইরান, লেবানন, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, জর্দান ও নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে এসেছিল। বিভিন্ন বিষয়ে মুসলিম ছাত্রদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে তাদের ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলে। আমি লক্ষ্য করি, ধর্মের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যরকম যা এর আগে আমি আর কখনও দেখিনি। তাই আমি ওই  ছাত্রদের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করি। ইসলামের বিভিন্ন শিক্ষার সঙ্গে যতই পরিচিত হতে থাকি ততই এ ধর্মের প্রতি আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে।

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সময়ে নও মুসলিম অধ্যাপক লিগেন হাউজেন এক মুসলিম ছাত্রের সঙ্গে পরিচিত হন। ওই ছাত্রের কথাবার্তা, আচরণ ও ধর্মীয় বিশ্বাস ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে আরো চিন্তা-গবেষণা করতে তাকে প্রেরণা যোগায়। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই ছাত্রের সঙ্গে ধর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে আমার কথাবার্তা হয়। আমি লক্ষ্য করি, ছেলেটি তার ধর্ম বিশ্বাসে খুবই অটল এবং আন্তরিক। এরপর আমি মসজিদে যাতায়াত শুরু করি এবং মুসলমানদের সঙ্গে কথা বলে ইসলাম সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পারি। আমার উদ্দেশ্য ছিল কেবল ইসলাম ও মুসলমানদের চিন্তা-বিশ্বাস সম্পর্কে জানা। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে যতই জানার চেষ্টা করি নিজের অজান্তেই আমি এ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। শেষ পর্যন্ত ইসলামকেই আমার জীবন বিধান হিসেবে বেছে নেই। ইসলাম গ্রহণের পর নিজের কার্ল নাম পরিবর্তন করে মোহাম্মাদ নামটি বেছে নেন।

ইসলামের কিছু বৈশিষ্ট্য এ ধর্মকে চিরন্তন করে রেখেছে। আসলে ইসলাম এমন এক জীবন্ত ধর্ম যার শিক্ষা ও দিক-নির্দেশনা সব যুগে মানুষের বিভিন্ন সমস্যা ও প্রশ্নের সমাধান দেয়। কারণ এ ধর্ম মানব প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসলাম মানুষকে জ্ঞানার্জন ও গবেষণার প্রতি আহ্বান জানায় যাতে মানুষ জীবন চলার ক্ষেত্রে সঠিক পথ বেছে নিতে পারে। নও মুসলিম অধ্যাপক মোহাম্মদ লিগেন হাউজেনও ইসলামের ওপর গবেষণা চালিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পান। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইসলামের যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে, তা হচ্ছে এ ধর্ম এমন সব প্রশ্ন করাকে স্বাগত জানায় যা সব সময় আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খেত। মুসলমানদের সঙ্গে কথা বলে আমি খুব সহজেই এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই যা নিয়ে পাদ্রীদের সঙ্গে আমার বিতর্ক হত।

নও মুসলিম অধ্যাপক মোহাম্মদ লিগেন হাউজেন  আরো বলেন, এ ধর্মের আরেকটি বিষয় আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে; আর তা হচ্ছে, এ ধর্ম মানুষকে চিন্তা-গবেষণার প্রতি আহ্বান জানায়। কিন্তু খ্রিস্টান ধর্মে চিন্তা-গবেষণা কিংবা প্রশ্ন করারই কোনা সুযোগ নেই। যদিও পাদ্রীদের অনেকেই দাবি করতেন, সব প্রশ্নেরই সুস্পষ্ট জবাব রয়েছে।

মুসলমানদের কাছে কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বিভিন্ন উদ্ধৃতি দিয়ে আমার প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতেন এবং ঠিকই সুন্দর ও যুক্তিসঙ্গত জবাব বের করে আনতেন।

নও মুসলিম অধ্যাপক মোহাম্মদ লিগেন হাউজেন বর্তমানে ইসলাম ধর্মকে সারা বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে চান। এ ব্যাপারে তিনি বলেন,

কেউ মানুক আর না মানুক ইসলামের বিধিবিধান কেবল মুসলমানদের জন্য নয় বরং সারা বিশ্বের মানুষের সৌভাগ্য ও কল্যাণের জন্য। আমাদের সবার উচিত ইসলামের নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক শিক্ষাগুলো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া যাতে এ ধর্ম সম্পর্কে সব রকম ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয় এবং ইসলামের ছায়া তলে সবাই শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88