সন্তানের বিয়ে ভাবনা

ভাবছিলাম রাসূল (সা)এর সুন্নাহ অনুযায়ী ছেলেমেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দেব। সংসার করার জন্য নয়, প্রেম করার জন্য। ওরা আমাদের সাথে থাকবে, লেখাপড়া করবে, পড়ায় একে অপরকে সহযোগিতা করবে, পার্কে যাবে, বাদাম খাবে, হাত ধরে হাঁটবে – সচরাচর প্রেম করার সময় মানুষ যা করে – কিন্তু বৈধ উপায়ে। তারপর যখন লেখাপড়া শেষ হবে তখন ওরা চাইলে পুরোদস্তুর সংসার করার জন্য নীড় ছেড়ে উড়াল দিতে পারে।


কিন্তু কথাটা যত জনের সাথেই আলাপ করেছি, অধিকাংশেরই প্রতিক্রিয়া দেখে অবাক হয়েছি যেন এ’ এক অভিনব ভাবনা! অনেকেই হাসে, কেউ কেউ লেখাপড়ার প্রয়োজনীতার প্রতি লক্ষ্য রাখার উপদেশ দেয়, কেউ কেউ বাস্তবতার প্রতি নির্দেশ করে বলে, ‘বিয়ে করলে খাওয়াবে কি?’ সব মিলিয়ে কেন যেন মনে হয় সন্তানের চরিত্রের চেয়ে সন্তানের লেখাপড়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তার আখিরাতের চেয়ে তার দুনিয়া অনেক বেশি জরুরী।

আমি বারো বছর শিক্ষকতা করেছি, স্কুল এবং ইউনিভার্সিটি মিলিয়ে; চার বছর ছাত্রছাত্রী পড়িয়েছি ক্যানাডায়, বাসায় এবং প্রতিষ্ঠানে। আজীবন পড়াশোনা করেছি কো-এজুকেশনে, ইন্টারের দুই বছর ব্যাতীত। আমি হলফ করে বলতে পারি – দেশে হোক বা বিদেশে, কো-এজুকেশন হোক কিংবা সমলিঙ্গ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, হোক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিংবা এর বাইরে – বজ্রকঠিন দৃঢ়তা ব্যাতীত সেই সময়টা নিজেকে ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব যখন যৌবনের সমস্ত হরমোন আপনাকে আহ্বান করছে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি। অসংখ্য ছেলেমেয়ে দেখেছি যাদের লেখাপড়া হয়েছে, কিন্তু জীবনটা হয়ে গিয়েছে এলোমেলো।

আপনি আপনার প্রভূর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করবেন অথচ এর মাশুল আপনাকে দিতে হবেনা এমনটা কি করে হয়? তাঁর করুণার ছায়া কেবল তখনই আপনাকে পরিবেষ্টিত করে রাখবে যখন তাঁর বিধিনিষেধকে আপনি কাঁচকলা দেখাবেন না, কিন্তু অল্প বয়সে এত কিছু মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার মত বুদ্ধি বিবেচনা কয়টা ছেলেমেয়ের থাকে? আপনি আপনার সন্তানকে প্রলোভনের মাঝে সাঁতার কাটতে দেবেন আর মনে মনে নিশ্চিত বোধ করবেন সে ওপারে নিরাপদে ভেসে উঠবে, সেটা কল্পনাবিলাস নয় কি? এর অর্থ এই নয় যে আপনি তার ওপর আস্থা রাখবেন না, কিন্তু আপনার বিশ্বাসটা যেন তার ওপর বোঝা হয়ে না যায় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা দেন না (সুরা বাক্কারা ২৮৬), তাই তিনি প্রত্যেকের জন্য সঙ্গী নির্ধারণ করে রেখেছেন (সুরা ইয়াসিন ৩৬) যেন প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের কাছে থেকে বন্ধুত্ব এবং প্রশান্তি লাভ করা যায় (সুরা রূম ২১)।

কিন্তু আপনি যদি তৃষ্ণার্তকে পানির উপস্থিতিতে পানি পান করতে বারণ করেন, তাহলে গুড লাক, পরিণতি কি হবে আমার বলে দেয়ার প্রয়োজন নেই। খাওয়াবে কি? বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, আপনার পরিবারকে কি আপনি খাওয়ান? যদি তাই মনে করে থাকেন তবে আপনার ঈমানে গুরুতর সমস্যা রয়েছে। কারণ আপনি আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করছেন যিনি বলেছেন তাঁর সকল সৃষ্টির রিজিকদাতা তিনি (সুরা যারিয়াত ৫৮)। মনে আছে সুলাইমান (আ)এর কথা? তিনি আল্লাহর সৃষ্টিকুলকে এক বেলা খাওয়ানোর আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু শুধু পিঁপড়েরাই সমস্ত খাবার সাবাড় করে দিয়েছিল। চাইনিজদের মত হিসেব করা বোকামী, যারা হিসেব কষে নির্ধারণ করে তাদের বর্তমান আয়ে তারা ঠিক দেড়টা সন্তান লালন করতে পারে! অথচ আমাদের জীবনের ফ্যাক্টরগুলো কোনটিই স্থির কিংবা নিশ্চিত নয়; এগুলো পরিবর্তিত হয়, হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

তাহলে আমরা কিসের ওপর ভিত্তি করে ধরে নিচ্ছি আমার সন্তান চরিত্র খুইয়ে হলেও কোনক্রমে লেখাপড়া শেষ করে, চাকরী পেয়ে তারপর বিয়ে করলে তার আর কোন চিন্তা নেই?! আমার এক বান্ধবী বলতেন তিনি এবং তাঁর মা তাঁর মামাদের আনা অসংখ্য বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন বিদেশে বিয়ে করবেন না বলে। তারপর দেশী পাত্রের সাথেই তাঁর বিয়ে হোল। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছর পর জীবনের প্রয়োজনে সেই দেশী পাত্র বিদেশী হতে বাধ্য হোল। ভাগ্যের ওপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তা নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়াটাও বোকামী। কিন্তু এখানে আমার কাছে মূলত দৃষ্টিভঙ্গিটাই সমস্যা বলে মনে হয়। ছেলে যদি বিয়ের পরেও বাবামায়ের দায়িত্বে থাকে, মেয়ে থাকে তার নিজের বাবামায়ের দায়িত্বে, কিংবা অবস্থাপন্ন হলে উভয় পরিবার মিলেমিশে দু’জনের দেখাশোনা করে তাহলে উভয়ের সন্তানদের চরিত্র সংরক্ষিত হয়। কিন্তু আমরা ‘নিজের’ এবং ‘পরের’ হিসেব থেকে উত্তীর্ণ হতে পারিনা।

ভাবতে পারিনা ছেলের বৌ মানেই ঘরে একজন বাড়তি কাজের লোক নয়, কিংবা মেয়ের জামাই মানেই মেয়েটাকে হাতপাসমেত তার ঘাড়ের ওপর তুলে দেয়ার প্রয়োজন নেই। শিক্ষিত ছেলের বৌ আমার নাতিনাতনীদের জন্য একজন উত্তম মা হবে, শিক্ষিত মেয়েজামাই আমার মেয়েকে উত্তম দিকনির্দেশনা দিতে পারবে। এটা আমাদের ক্ষুদ্রতার ফসল যে এই বিভেদগুলো থেকে উত্তরণ করতে না পারার কারণে আমরা আমাদের সন্তানদের বিয়ে পিছিয়ে দেই দশকের পর দশক, ওদের প্রয়োজনের প্রতি কোনপ্রকার ভ্রূক্ষেপ না করেই।

চাকরী বাকরী খুঁজতে গেলেই একটা শব্দের মুখোমুখি হতে হয়, আপনি ‘মাল্টিটাস্কার’ কি’না। একই সময়ে নানানপ্রকার কাজ ম্যানেজ করতে পারার দক্ষতাকে বলা হয় ‘মাল্টিটাস্কিং’। মাল্টিটাস্কিং ব্যাক্তির যোগ্যতার মাপকাঠি। আমরা আমাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকে এক গ্লাস পানিও ঢেলে খেতে দেইনা, যেন এটাই স্নেহের মাপকাঠি! অথচ এর ফলে আমরা গড়ে তুলছি একটি কুঁড়ে, অকর্মন্য এবং অযোগ্য প্রজন্ম যারা নিজেদের কাজগুলো নিজেরা বুঝে করতে পারেনা, প্রতিকুল পরিস্থিতি সামাল দিতে অক্ষম, বিপদ এলে মুষড়ে পড়ে। অথচ আপনার সন্তানরা যত বেশি যোগ্যতা ধারণ করবে তা তাদের চলার পথকে তত বেশি সাবলীল করবে। সফল বাবামায়েদের যোগ্যতার প্রমাণ আত্মনির্ভরশীল সন্তান গড়ে তোলায় যারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, যেকোন পরিস্থিতি সামাল দিতে দক্ষ, যেকোন কাজে দক্ষতা অর্জন করতে সচেষ্ট, দায়িত্বশীল এবং সামাজিক। এই ধরণের ছেলেমেয়েদের জন্য মাল্টিটাস্কিং কোন ব্যাপারই নয়।

আপনি অযোগ্য সন্তান গড়ে তুললে তাকে সময়মত বিয়ে দিতে ভয় পাবেন এটাই স্বাভাবিক, তার বিয়ে করার প্রয়োজন সৃষ্টি হলেও বিয়ে করার মত ম্যাচুরিটি সৃষ্টি হয়নি এটা বোধগম্য। কিন্তু যোগ্য সন্তানদের বাবামায়েরা যদি লেখাপড়ার দোহাই দিয়ে সন্তানকে আল্লাহর বিধিবিধান অনুযায়ী চলতে সহযোগিতা না করেন, সেটা দুঃখজনক। আমার সন্তানের লেখাপড়ার দৌড় নির্ভর করবে তার চেষ্টা এবং নিষ্ঠার ওপর, তার স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্নকে ছুঁতে চাওয়ার আকাঙ্খা তাকে অবশ্যই সেই বন্দরে পৌঁছে দেবে। কিন্তু সে সময় যদি তার পাশে থাকে এমন একজন সঙ্গী যে তাকে সাহস জোগাবে, তার পথের কাঁটাগুলো তার হয়ে সরিয়ে দেবে, তার অভিজ্ঞতাগুলো তার সাথে শেয়ার করবে তবে এমন সঙ্গীর সাহচর্য তাকে আরো অনেক বড় বড় প্রতিকুলতায় ধৈর্য্য এবং স্থৈর্য্য জোগাবে। এই অভিজ্ঞতাই তাকে গড়ে দেবে মাল্টিটাস্কিংয়ের শক্ত ভিত।

যে কোনদিন পানিতে নামেনি সে সাগরে সাঁতার কাটবে কোন সাহসে? আপনি কি সবসময় আপনার সন্তানের ডাঙ্গায় অবস্থান নিশ্চিত করতে পারবেন? আল্লাহ বাবামাকে তিনটি দায়িত্ব দিয়েছেন – সন্তানের উত্তম নাম রাখা, সন্তানকে আল্লাহর বিধিনিষেধ শিক্ষা দেয়া, সন্তানকে উপযুক্ত বয়সে বিয়ে দেয়া। সন্তানদের ভালো না খাওয়ালে, ভালো পোশাক না পরালে, তাদের অতিরিক্ত স্নেহ দিয়ে স্বার্থপর এবং অকর্মন্য করে না তুললে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোতে না পড়ালে কিংবা তাদের বাড়ি গাড়ি করে না দিলে আল্লাহ আমাদের দায়ী করবেন না। কিন্তু সন্তানদের তাঁর প্রনীত নিয়মাবলী শিক্ষা না দিলে তিনি আমাদের দায়ী করবেন, কারণ এই নিয়মাবলী কেবল তার নিজের নিরাপত্তার জন্য দেয়া হয়নি বরং তার প্রভূর সমুদয় সৃষ্টিকুলের নিরাপত্তার স্বার্থে দেয়া হয়েছে। সময়মত বিয়ে না দেয়ার কারণে আমার সন্তান যখন বিপথগামী হয় সে একা পথভ্রষ্ট হয়না, আরো একটি ছেলে না মেয়েকে সে বিপথগামীতায় সঙ্গী করে, উভয়ের পরিবারকে কষ্ট এবং সামাজিক লজ্জার সাগরে নিমজ্জিত করে, তার উদাহরণ তার ভাইবোনসহ সমাজের আরো অনেককে প্রভাবিত করে এবং এই সম্পূর্ন ব্যাপারটির দায়দায়িত্ব বর্তায় আমার ঘাড়ে। এই দায়দায়িত্ব আপনি নিতে পারবেন কি’না জানিনা, আমি পারবনা।

তাই এসব চিন্তা করলে অল্প বয়সে ছেলেমেয়ে বিয়ে দেয়া নিয়ে আমার আর হাসি আসেনা। কিন্তু আমরা বাস করি এমন এক সমাজে যেখানে পার্থিব মোহগুলো আমাদের মনের ওপর পরবর্তী জীবনের আকাঙ্খার চেয়ে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে এবং আমরা আমাদের প্রতিবেশী বন্ধুদের প্রাইভেসী দিতে দিতে তাদের সাথে ‘হাই হেলো’র অতিরিক্ত আর কোন সম্পর্ক রাখিনি। ফলে তাদের এই মনোভাব পরিবর্তন করার সুযোগ, অধিকার কিংবা যোগ্যতা কিছুই আমাদের অবশিষ্ট নেই। সুতরাং, আমাদের সন্তানদের সঠিক পথে রাখার পূর্ণ সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের জন্য উপযুক্ত পাত্র কিংবা পাত্রী পাওয়ার আশা করতে পারিনা।

যে সমাজে বিয়ে কঠিন হয়ে যায় সে সমাজে পাপ সহজ হয়ে যায়। ইসলামে সঙ্গী নির্বাচন বাবামা এবং সন্তানের যৌথ প্রযোজনার বিষয়। লক্ষ্য করুন, আমি ইসলামের কথা বলছি, বাংলাদেশী সংস্কৃতির কথা নয়। ক্যানাডায় ছেলেমেয়েদের দেখে মায়া লাগত। এরা সবাই যে পাপে নিমজ্জিত হতে আগ্রহী ছিল তেমন কিন্তু নয়। এদের অনেকেই চিন্তাচেতনায় শুদ্ধচারী। কিন্তু তাদের বাবামায়েরা সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের কোন পরিচ্ছন্ন গাইডলাইন দিয়ে দেয়না কিংবা সহযোগিতা করেনা। তখন তাদের একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সঙ্গী নির্বাচন করা যা অনেকসময় তাদের অনিচ্ছাসত্ত্বেও সীমারেখা পার করে যায়। তাদের বাবামা তাদের নির্বাচিত পাত্র কিংবা পাত্রী দেখে কেবল সঙ্গীর ব্যাপারে মন্তব্য দিয়েই খালাস, বিয়ের ব্যাপারে সহযোগিতা করতে আগ্রহ দেখান না। ফলে সন্তানরা তাদের কথাকে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন কিংবা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

কিন্তু স্বল্পজ্ঞান এবং অল্প অভিজ্ঞতার আলোকে নির্বাচিত প্রেম প্রায়ই বাস্তবতার ভিত্তিমূলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকেনা। ফলে অনেকসময় তারা মানসিক, শারীরিক বা সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় – অনেকসময় সারা জীবনেও এই ক্ষতি আর পুষিয়ে ওঠা যায়না। মালয়শিয়ায় এসে দেখলাম বাবামা প্রথম দু’টি দায়িত্ব নিলেও তৃতীয় দায়িত্বটি তুলে দিয়েছেন সন্তানদের ঘাড়ে। সুতরাং, তারা নিজেরাই সঙ্গী নির্বাচন করে। বাবামায়ের সহযোগিতা পেলে এই নির্বাচন হয়ত বাস্তবতার মজবুত ভিত্তির ওপর প্রোথিত হত। কিন্তু স্বল্প বুদ্ধি এবং অধিকতর অল্প অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে অল্প বয়সে বিয়ে করলেও এখানে বিবাহবিচ্ছেদের মাত্রা ভয়াবহ। উভয় দেশেই সিঙ্গল প্যারেন্টদের পরিমাণ এবং স্ট্রাগল হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করে। ভালোমন্দ না বুঝে, পরিণতি চিন্তা না করে কাউকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য। ক্ষেপবেন না, ‘হুজুগে বাঙ্গালী’ বাগধারাটা এমনি এমনি আসেনি। আমরা কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, কি পাব, কি হারাব একটু দম নিয়ে ভাবার সময় কিন্তু পার হয়ে যাচ্ছে। এখন হয়ত আমাকে বোকা ভেবে হাসছেন, পরে আবার নিজে বোকা প্রমাণিত না হোন যেন সেদিকে একটু খেয়াল করুন।

-Rehnuma Bint Anis

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member