ইসনা আশারিয়া শিয়া সম্প্রদায়ঃ পরিচিতি ও আক্বীদা

ইসনা আশারিয়া শিয়া সম্প্রদায়ঃ পরিচিতি ও আক্বীদা

(১২ ইমামে বিশ্বাসী শিয়া সম্প্রদায়)

মূলঃ আরবী।

অনুবাদ ও সংক্ষিপ্তকরণঃ আব্দুর রাকীব মাদানী।  দাঈ, দাওয়াহ সেন্টার খাফজী সউদী আরব।

পরিচয়ঃ

১২ ইমামে বিশ্বাসী ইমামী শিয়া সম্প্রদায় মুসলিমদের সেই ফের্কার নাম যারা মনে করে যে, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর পর খেলাফতের উত্তরাধিকার হিসাবে আবু বাকর, উমার ও উসমান (রাযিঃ) এর থেকে আলী (রাযিঃ) বেশী হকদার।

(শিয়া কারা? এই প্রশ্নের  উত্তরে তাদের শাইখ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন নুমান আল্ মুফীদ বলেনঃ তারা আমীরুল মুমেনীন আলী (আঃ) এর অনুসারী। নবী (সাঃ) এর পর তারা কোনো প্রকার বিরতি ছাড়াই আলী (আঃ) কে ইমাম মনে করেন এবং তার পূর্বে যারা খলীফা হোন তাদের খেলাফত অস্বীকার করেন এবং পরোক্ষভাবে তাদের আলী (আঃ) এর অনুসারী মনে করেন।) [ইসনা আশারিয়া শিয়াদের আক্বীদা, আব্দুর রাহমান বিন সাআদ শাসারী, পৃঃ ২৬]

তাদের ইমামী বলা হয়, কারণ তারা ইমামতকে (নেতৃত্বকে) দ্বীনের মৌলিক বিষয় মনে করে। আর তাদের ইসনা আশারী (দ্বাদশী) বলা হয়, কারণ তারা ১২ জন ইমামকে বিশ্বাস করে, যাদের সর্বশেষ ইমাম সামুর্রা নামক স্থানের (সিরদাবে) সুড়ঙ্গে অবস্থান করছে। আহলুস সুন্নার মুকাবিলায় শিয়া বলতে তাদেরই বুঝায়। বর্তমানে তারা মুসলিম বিশ্বে প্রসার লাভের উদ্দেশ্যে নিজ মাযহাব প্রচারে সচেষ্ট।

তাঁদের ইমামগণ ও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ববর্গঃ

১২ জন ইমাম যাঁদেরকে তারা ইমাম হিসাবে মানে, তাদের পরম্পরাগত তালিকা নিম্নরূপঃ

১-আলী বিন আবী ত্বালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। তারা তাঁকে ‘মুর্তাজা’ উপাধি দিয়ে থাকে। তিনি খুলাফায়ে রাশেদীনের একজন এবং রাসূল (সাঃ) এর জামাতা। তাঁকে খারেজী আব্দুর রাহমান বিন মুলজিম কুফার মসজিদে ১৭ই রামাযান ৪০ হিজরীতে হত্যা করে।

২-হাসান বিন আলী (রাযিঃ)। তাঁকে তারা ‘মুজতাবা’ উপাধি দিয়ে থাকে। (৩-৫০ হিঃ)

৩-হুসাইন বিন আলী (রাযিঃ)। তাঁকে তারা ‘শাহীদ’ উপাধি দিয়ে থাকে। (৪-৪১ হিঃ)

৪-আলী যায়নুল আবেদীন বিন হুসাঈন। তাঁকে তারা ‘সাজ্জাদ’ উপাধি দিয়ে থাকে। (৩৮-৯৫ হিঃ)

৫-মুহাম্মদ আল বাকির বিন আলী যায়নুদ্দীন। তাঁকে তারা ‘বাকির’ উপাধি দিয়ে থাকে। (৫৭-১১৪হিঃ)

৬-জা’ফার সাদিক বিন মুহাম্মদ আল বাকির। তাঁকে তারা ‘সাদিক’ উপাধি দিয়ে থাকে (৮৩-১৪৮ হিঃ)

৭-মূসা আল কাযিম বিন জা’ফার। তাঁকে তারা ‘কাযিম’ উপাধি দিয়ে থাকে। (১২৮-১৮৩ হিঃ)

৮-আলী আর রেযা বিন মূসা কাযিম। তাঁকে তারা ‘রিযা’ উপাধি দিয়ে থেকে। (১৪৮-২০৩ হিঃ)

৯-মুহাম্মদ আল জাউয়াদ বিন আলী। তাঁকে তারা ‘ত্বাক্বী’ উপাধি দিয়ে থাকে। (১৯৫-২২০ হিঃ)

১০- আলী আল হাদী বিন মুহাম্মদ আল জাউয়াদ। তাঁকে তারা ‘নক্বী’ উপাধি দিয়ে থাকে। (২১২-২৫৪ হিঃ)

১১-আল হাসান আল আসকারী বিন আলী। তাঁকে তারা ‘যাকী’ উপাধি দিয়ে থাকে। (২৩২-২৬০ হিঃ)

১২- মুহাম্মদ আল মাহদী বিন হাসান আল আসকারী। তাঁকে আল হুজ্জা আল কায়িম আল মুনতাজার [প্রতিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত প্রমাণ] উপাধি দিয়ে থাকে। (২৫৬ হিঃ —-)

তারা বিশ্বাস করে যে, তাদের ১২ তম ইমাম সামুর্রায় তার পিতার বাসার সুড়ঙ্গে প্রবেশ করেছে অতঃপর আর ফিরেন নি। আত্মগোপন করার সময় তার বয়স কত ছিল? এ নিয়ে তারা মতভেদ করেছে। কেউ কেউ বলেন সেই সময় তার বয়স ছিল চার বছর আর কেউ বলেন আট বছর। তবে বেশীরভাগ গবেষক বিষয়টিকে একটি ভ্রান্ত ধারণা মনে করে এবং এটি শিয়াদের তৈরিকৃত কল্পিত ঘটনা হিসাবে আখ্যা দেয়।

তাদের অন্যান্য প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্বগণঃ

১-তাদের ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ ব্যক্তিবর্গের অন্যতম হল আব্দুল্লাহ বিন সাবা। (যদিও তাদের অনেকে এটা অস্বীকার করে) সে ইয়েমেনের একজন ইয়াহূদী ছিল। ইসলাম প্রকাশ করার পর ঈয়াহূদী চিন্তা-ধারা শিয়ামতবাদে অনুপ্রবেশ ঘটায়। যেমন ‘রাজআত’ এর বিশ্বাস আমদানি করে। (রাজআত অর্থ ফিরে আসা। তারা বিশ্বাস করে কেয়ামত পূর্বে ১২ তম ইমাম এবং কিছু মৃত পুনরায় তাদের পূর্বের আকারে পৃথিবীতে ফিরে আসবে এবং যারা শিয়াদের উপর অথ্যাচার করেছে তাদের বদলা নিবে)। সেই আমদানিকৃত বিশ্বাসের মধ্যে হচ্ছে, আলী (রাঃ) এর মৃত্যু বরণ না করার আক্বীদা, তিনি সারা যমীনের মালিক, এমন ক্ষমতার মালিক যা সৃষ্টির আর অন্য কেউ রাখে না এবং সে এমন জ্ঞানের অধিকারী যা অন্য কারো কাছে নেই। ইয়াহূদী আক্বীদা থেকে আমদানিকৃত শিয়াদের আর এক আক্বীদা হল, ‘বাদা’ বিশ্বাস। (বাদা ইয়াব্দূ অর্থ হল প্রকাশ পাওয়া। তারা বিশ্বাস করে এমন কিছু বিয়ষ রয়েছে যা আল্লাহ তাআলা তা প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে জানতেন না –নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক-)।

আব্দুল্লাহ বিন সাবা ইয়াহূদী থাকা অবস্থায় বলতঃ ইউশা বিন নূন হল নবী মূসা (আঃ) এর অসিয়তকৃত ব্যক্তি তথা প্রতিনিধি। অতঃপর ইসলাম প্রকাশের পর বলেছিলঃ আলী (রাযিঃ) হচ্ছে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর অসিয়তকৃত প্রতিনিধি। সে মদীনা, মিসর, কূফা বাসারা ইত্যাদি স্থান ভ্রমণ করে এবং আলী (রাযিঃ) কে বলেঃ “তুমি তুমি”। অর্থাৎ তুমি আল্লাহ। এ কারণে আলী (রাযিঃ) তাকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিলেন কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযিঃ) তাকে এমন না করার পরামর্শ দিলে তিনি তাকে মাদাইন নামক স্থানে বিতাড়িত করে দেন।

২-মানসূর আহমাদ বিন আবী ত্বালিব আত্ ত্বাবরুসী মৃতঃ ৫৮৮ হিঃ। কিতাবুল ইহতিজাজ এর লেখক, যা ১৩০২ হিজরীতে ইরানে ছাপা হয়।

৩-কুলাইনী। কিতাবুল কাফী এর লেখক যা ঈরানে ১২৭৮ হিজরীতে প্রকাশিত। এই গ্রন্থটির মর্যাদা তাদের নিকট তেমনই যেমন আহলুস সুন্নার নিকট বুখারীর মর্যাদা। তাদের মতে সেই গ্রন্থে ১৬১৯৯ টি হাদীস রয়েছে।

৪-আল্ হাজ্জ মির্যা হুসাইন বিন মুহাম্মদ আন্ নূরী আত্ ত্বাবরূসী মৃতঃ ১৩২০ হিঃ। নজফে সমাধিত। তিনি (ফাসলুল খিত্বাব ফী ইসবাতি তাহরীফি কিতাবি রাব্বিল আরবাব) এর লেখক। তাতে তিনি মনে করেন বর্তমান কুরআনে কিছু কম-বেশী করা হয়েছে। তন্মধ্যে সূরাতুল ইনশিরাহ এ একটি বাক্যর ঘাটতি রয়েছে, তা হলঃ (ওয়া জাআলনা আলিয়্যান স্বাহরাক) অর্থাৎ এবং আমি আলীকে করেছি তোমার জামাতা। গ্রন্থটি ইরানে ১২৮৯ হিজরিতে প্রকাশিত হয়েছে।

৫-আয়াতুল্লাহ আল্ মামক্বানী, তিনি “তানক্বীহুল মাক্বাল ফী আহওয়ালির রিজাল” গ্রন্থের লেখক। তাদের নিকট তিনি রিজাল শাস্ত্রের ইমাম হিসাবে স্বীকৃত। এই গ্রন্থেই সাহাবী আবু বাকর ও উমার (রাযিঃ) কে ‘জিব্ত’ ও ‘ত্বাগুত’ (শয়তান ও যাদুগর ) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। দেখুন ১ম খন্ড পৃঃ ২০৭। গ্রন্থটি ১৩৫২ হিজরীতে নাজাফে প্রকাশিত।

৬-আবু জা’ফর আত্ তূসী লেখকঃ তাহযীবুল আহকাম।

৭- মুল্লা মুহসিন আলকাশী লেখকঃ কিতাবুল ওয়াফী।

৮-মুহাম্মদ বাকির মাজলেসী নামে প্রসিদ্ধ লেখকঃ বিহারুল আনওয়ার।

৯-আয়াতুল্লাহ আল্ খুমায়নী। আধুনিক যুগের শিয়া নেতা, যিনি আধুনিক ইরান বিপ্লবের নায়ক এবং বর্তমান ইরান ইসলামী গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর প্রসিদ্ধ দুটি বইর নাম হল, কাশফুল্ আসরার এবং আল্ হুকুমাহ আল্ ইসলামিয়াহ। তিনি শিয়া মতবাদে সর্বপ্রথম (বেলায়াতুল্ ফক্বীহ) অর্থাৎ ইমামুল হুজ্জার অনুপস্থিতিতে ফকীহ ব্যক্তির ইমামত তথা নেতৃত্বের পক্ষে মত ব্যক্ত করেন।

আক্বীদা ও চিন্তাধারা

১-ইমামাহ বা নেতৃত্বঃ তাদের মতে নেতৃত্ব দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হওয়া চাই। অর্থাৎ পূর্বের নেতা পরের নেতাকে নির্দিষ্টরূপে নির্ধারণ করবেন; তার গুণাগুণ বর্ণনার মাধ্যমে নয়। নেতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, নবী (সাঃ) উম্মতকে নেতৃত্বহীন অবস্থায় ছেড়ে মারা যাবেন, তা হয় না; বরং তাঁর জন্য কোনো এক ব্যক্তিকে নির্ধারণ করা জরূরী ছিল, যাঁর দিকে পরবর্তী লোকেরা প্রত্যাবর্তন করবে এবং তাঁর প্রতি ভরসা করবে।

তারা এই বিষয়ে বলে থাকে যে, নবী (সাঃ) “গদীরে খাম” দিবসে স্পষ্টই আলীর ইমামত নির্দিষ্ট করে দেন এবং বলেন যে, সে নবী (সাঃ) এর পরে ইমাম/খলীফা হবেন। অবশ্য গদীরে খাম নামক ঘটনায় এমন নির্ধারণের বিষয়টি আহলে সুন্নাতের মুহাদ্দেস ও ঐতিহাসিকদের নিকট অস্বীকৃত ও অসাব্যস্ত।

তারা মনে করে, অবশ্যই আলী তাঁর দুই পুত্র হাসান ও হুসাইনের নেতৃত নির্ধারণ করেছিলেন। এই ভাবে অন্য ইমামরাও। তাই প্রত্যেক ইমাম তার পরের ইমামকে নির্ধারণ করবে আর এটা হবে তার অসীয়ত স্বরূপ। তাদের তারা “আউস্বিয়া” (অসিয়তকৃত ব্যক্তিবর্গ) নামে আখ্যায়িত করে থাকে।

২-ইসমত বা নিষ্পাপে বিশ্বাস রাখাঃ

তাদের বিশ্বাস যে, তাদের সকল ইমাম ভুল-ত্রুটি এবং ছোট বড় পাপ থেকে মুক্ত ও নিষ্পাপ।

৩-ইলমে লাদুন্নীর আক্বীদাঃ (বিশেষ জ্ঞান যা কেবল বিশেষ ব্যক্তিকে দেওয়া হয়)

তাদের প্রত্যেক ইমামকে নবী (সাঃ) এর নিকট থেকে বিশেষ জ্ঞান দেওয়া হয়েছে (ইলমে লাদুন্নী দেওয়া হয়েছে), যা দ্বারা তারা শরীয়ত পরিপূর্ণ করে থাকে। তারা ইলমে লাদুন্নীর অধিকারী, তাদের ও নবীদের মধ্যে এছাড়া কোনো পার্থক্য নেই যে, নবীদের কাছে অহী আসে আর তাদের কাছে অহী হয় না। নবী (সাঃ) তাদের শরীয়তের ভেদ দিয়ে গেছেন, যেন তারা সময়ের দাবী অনুযায়ী সাধারণ লোকদের বর্ণনা দেয়।

৪-অলৌকিকতায় বিশ্বাসঃ

ইমামের হাতে অলৌকিক কিছু প্রকাশ পাওয়া সম্ভব। এসবকে তারা মুজিযাহ বলে থাকে। যদি কোনো ক্ষেত্রে পূর্বের ইমাম পরের ইমামকে নির্ধারণ না করে থাকে তাহলে এমতাবস্থায় পরের ইমাম অলৌকিকতার মাধ্যমে নির্ধারণ হবে।

৫-গায়বা বা অনুপস্থিতির আক্বীদাঃ

তারা বিশ্বাস করে যে, কোনো যুগ হুজ্জাতুল্লাহ থেকে শূন্য হতে পারে না। ‌তাই এই বিশ্বাসের ফলস্বরূপ তারা বিশ্বাস করে যে, ১২তম ইমাম তাঁর সুড়ঙ্গে গায়েব হয়ে গেছে বা আত্মগোপন করেছে। তারা আবার এই বিষয়টিকে ছোট আত্মগোপন ও বড় আত্মগোপনে বিভিক্ত করে থাকে, যা তাদের পৌরাণিক কাহিনীর অন্তর্ভুক্ত।

৬-রাজআত বা প্রত্যাবর্তনে বিশ্বাসঃ

তারা বিশ্বাস করে যে, তাদের ১২তম ইমাম হাসান আল আসকারী শেষ যামানায় প্রত্যাবর্তন করবে অর্থাৎ ফিরে আসবে যখন আল্লাহ তাকে পাতালকুঠরি থেকে বের হওয়ার আদেশ দিবেন। তিনি এসে জুলুম ও অত্যাচারে পরিপূর্ণ পৃথিবীকে ন্যায় ও সুবিচারে ভরে দিবেন এবং শিয়া বিরোধীদের বদলা নিবেন।

৭-তুক্ ইয়াহ করার আক্বীদাঃ (সওয়াব মনে করতঃ অন্তরে যা আছে তার বিপরীত প্রকাশ করা)

তারা এমন করাকে দ্বীনের মৌলিক বিধান মনে করে এবং তুকইয়াহ পরিত্যাগ করাকে নামায পরিত্যাগ করার মত পাপ মনে করে। তাদের শেষ ইমাম পৃথিবীতে পুণরায় আগমনের পূর্বে এই বিধান পালন করা ওয়াজিব। যে তার পূর্বে তা পরিত্যাগ করবে সে দ্বীন থেকে এবং ইমামিয়্যাহ মতবাদ থেকে বের হয়ে যাবে। তাদের ৫ম ইমাম আবু জাফর এর বরাতে তারা উল্লেখ করেছে, “তুকইয়া আমার দ্বীন এবং আমার পূর্ববর্তীদের দ্বীন, যার তুকইয়া নেই তার ঈমান নেই”।

৮-মুত্ আহ করাঃ (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কন্ট্রাক্ট বিবাহ করা)

তারা মহিলার সাথে মুতআহ সম্পর্ক করাকে উত্তম স্বভাব এবং অতিউত্তম নৈকট্যের কাজ মনে করে এবং এর স্বপক্ষে কুরআনের এই দলীল উপস্থাপন করে। (অতঃপর তাদের মধ্যে যাদের তোমরা সম্ভোগ করেছ, তাদেরকে তাদের ধার্যকৃত মহর প্রদান কর।) [নিসা/২৪]

এই প্রকার বিবাহকে ইসলাম হারাম করেছে, যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছু বিনিময়ে করা হয়। অধিকাংশ আহলুস্ সুন্নাহ বিবাহে শর্তারোপ করেছে যে, তা যেন অনির্দিষ্টকালের নিয়তে হয়। তাছাড়া মুতআহ বিবাহের রয়েছে কিছু সামাজিক কুপ্রভাব, যা তা নিষিদ্ধতার মতকে দৃঢ়তা প্রদান করে।

৯-বর্তমান কুরআন ব্যতীত ফাতেমা মাসহাফ (কুরআন) নামক অন্য কুরআন থাকার দাবীঃ

তারা মনে করে, তাদের নিকট বর্তমান কুরআন ব্যতীত ফাতেমী মাসহাফ নামে অন্য একটি কুরআন রয়েছে। কুলায়নী তার আল কাফী গ্রন্থে পৃষ্ঠা ৫৭ এ উল্লেখ করেছেন। জাফর সাদেক থেকে বর্ণিত “আমাদের নিকট রয়েছে ফাতেমী মাসহাফ। রাভী বলেনঃ আমি বললামঃ ফাতেমার মাসহাফ কি? তিনি বললেনঃ তা এমন মাসহাফ (কুরআন) যা তোমাদের এই কুরআনের তিন গুণ। আল্লাহর কসম তাতে তোমাদের কুরআনের একটি অক্ষরও নেই”।

১০-বারাআত বা সম্পর্কচ্ছেদ ঘোষণা করাঃ

তারা তিন খলীফা আবু বাকর, উমার এবং উসমান (রাযিঃ) হতে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয় এবং তাদের জঘন্য বিষেশণে বিষেশিত করে। তারা মনে করে উক্ত তিন ব্যক্তি আলী (রাযিঃ) এর খেলাফত অবৈধ পন্থায় জবরদখলকারী। এই কারণে তারা গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করার সময় বিসমিল্লাহ না বলে তাদের প্রতি লানত (অভিষাপ) দেওয়ার মাধ্যমে আরম্ভ করে। এছাড়াও তারা বহু সাহাবী এমনকি মুমিনদের মা আয়েশা (রাযিঃ) কে জঘন্য ভাষায় অভিষাপ দেয় এবং তাদের মান সম্মানে আঘাত করে।

১১-বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনঃ

তাদের অনেকে আলী (রাযিঃ) সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করে থাকে। অনেকে তাকে উলুহিয়্যাতের (উপাস্যের) স্তরেও পৌঁছিয়েছে যেমন সাবাঈ শিয়ারা। তাদের অনেকে বলেছে যে, জিবরীল ফেরেশতা ভুল করে আলীর স্থানে মুহাম্মদের নিকট রেসালাত নিয়ে অবতরণ করে; কারণ আলী দেখতে নবী (সাঃ) এর মত ছিল। যেমন কাক কাকের মত হয় এই জন্য তাকে তারা গুরাবিয়্যাহ (কাক সদৃশ্য ) নামকরণ করে।

১২-গদীরে খাম নামক ঈদ পালনঃ

এটি তাদের একটি ঈদ যা ১৮ই যুল হজ্জে উদযাপিত হয় এবং তারা এই ঈদকে ইদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা থেকে প্রাধান্য দেয় এবং ঈদুল আকবার (সবচেয়ে বড় ঈদ) আখ্যা দেয়। এই দিনে রোযা রাখা তাদের নিকট সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। এটা সেই দিন যে দিন সম্পর্কে তারা বিশ্বাস করে যে, এই দিনে নবী (সাঃ) আলী (রাযিঃ) কে খেলাফতের অসীয়ত করেছিলেন।

এছাড়া তাদের আরও একটি ঈদ রয়েছে যা তারা রবিউল আউয়াল মাসের নবম তারিখে উদযাপন করে। সেটা তাদের বাবা শুজাউদ্দীনের ঈদ। এটা আসলে আবু লুলু অগ্নিপূজকের উপাধি যে, উমার বিন খাত্তাব (রাযিঃ) কে হত্যা করেছিল।

১৩-তারা শোক পালনের অনুষ্ঠান করে, মৃতকে স্মরণ করে বিলাপ করে কাঁদে, বুক চাপড়ায়, ধারাল অস্ত্র দ্বারা পিঠ আঘাত করে রক্তাক্ত করে। এই প্রকার কাজ তারা মুহর্রম মাসের প্রথম দশকে সওয়াবের আশায় করে এবং পাপের কাফ্ফারা মনে করে। বর্তমানে যদি কেউ তাদের পবিত্র স্থানাদি যেমন কারবালা, নাজাফ, কুম ইত্যাদির যিয়ারত করে, তাহলে আরও অনেক আশ্চর্য কার্যকলাপ দেখতে পারে। [অবশ্য এখন ইন্টার্নেটেও তা দেখা যেতে পারে]

[উপরোক্ত আক্বীদার সাথে সাথে তারা বিভিন্ন বড় শির্কে লিপ্ত। যেমন, আল্লাহ ছাড়া সৃষ্টির কাছে দুআ করা, তাদের নিকট আশা-ভরসা করা, তাদের জন্য নযর-মানত করা, সাজদা করা, তাওয়াফ করা প্রভৃতি]

তাদের বর্তমান অবস্থানঃ

বর্তমানে ইসনা আশারিয়া তথা ইমামিয়া শিয়াদের মূল অবস্থান হচ্ছে ইরান। এ দেশই হচ্ছে তাদের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়াও একটি বড় সংখ্যা রয়েছে ইরাকে এবং (কম-বেশী সমস্ত মধ্যপ্রাচ্যে এমনটি উপমহাদেশে ও আফ্রীকাতেও)।

সারাংশ , শিয়া মতবাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে এ নিয়ে যে, আবুবকর, উমার ও উসমানের (রাযিঃ) তুলনায় আলী (রাযিঃ) খেলাফতের বেশী হকদার। অতঃপর ক্রমশঃ এই মতবাদ বৃদ্ধি লাভ করে এবং পরবর্তীতে একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ও আক্বীদার ফের্কায় পরিণত হয়, যার ঝান্ডাতলে ইসলাম ও মুসলিম শত্রুরা আশ্রয় নেয়। ইসলামী ইতিহাস গভীর ভাবে অধ্যয়ন করলে জানা যাবে যে, বৃহৎ মুসলিম দেশের বিরূদ্ধে বিদ্রোহ ও বিচ্ছিন্নতার প্রায় সকল আন্দোলনের পিছনে কোনো না কোনোরূপে কোনো শিয়াগোষ্ঠির হাত রয়েছে এবং বর্তমানেও তা অব্যাহত রয়েছে। তাদের নিজস্ব চিন্তা-ধারার কারণে শিয়া মতবাদ যেন ইসলাম থেকে সম্পূর্ণ একটি পৃথক দ্বীনের রূপ নিয়েছে। এর ফলে ইসলাম শত্রু এবং পাশ্চাত্ব সমাজ মুসলিম জাতিকে আপসে বিভেদকারী বহুদলীয় ধর্ম হিসাবে পেশ করার সুযোগ পাচ্ছে এবং খৃষ্ট মতবাদের সাথে তুলনা করছে, যার সংখ্যা সেঞ্চুরী ছাড়িয়ে গেছে।

 

(মূলগ্রন্থঃ আল মাওসূআ আল মুয়াস্সারা ফিল্ আদইয়ান ওয়াল্ মাযাহিব ওয়াল্ আহযাব আল মুয়াসিরাহ (ধর্ম, মতবাদ ও আধুনিক ফের্কা সংক্রান্ত সহজ বিশ্বকোষ)

সম্পাদনা, ড. মানি বিন হাম্মাদ আল জুহানী, খন্ড ১ পৃষ্ঠা ৫৫-৬০

প্রকাশনায়ঃ দারুন নাদওয়াহ আল আলামিয়্যাহ, রিয়াদ, প্রকাশকালঃ ১৪১৮ হিঃ

অনুবাদঃ আব্দুর রাকীব মাদানী)

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member