এক পরিবারের এক রাতের ত্যাগে মুসলমান হলেন হাজার হাজার রোমানিয়ান

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বেড়াতে গেছেন রোমানিয়ান এক দম্পতি। একদিন একটি নির্জন বরফে ঢাকা পাহাড়ি এলাকা ঘুরতে যান তারা।

হাঁটতে হাঁটতে একসময় পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় পথ হারিয়ে গেলেন ঐ দম্পতি। পথ খুঁজতে খুঁজতে সন্ধ্যা নামলে দিশেহারা হয়ে পড়েন তারা। দ্রুত অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে চারদিক। কনকনে শীত, সঙ্গে হিমেল হাওয়া আর অদ্ভুত একটা ভয় গ্রাস করে তাদের। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। মাঝে মাঝে শিয়ালের হুক্কা হুয়া ডাকে পরিবেশটাকে আরো ভারি করে তুলছে। হঠাৎ দেখতে পেলেন দূরে কোথাও হালকা একটা আলো জ্বলছে। মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে তারা সেদিকে হাঁটতে লাগলেন। কাছে গিয়ে দেখলেন, একটি কুঁড়েঘর।

দরজায় টোকা দিতেই একজন জীর্ণ-শীর্ণ মধ্য বয়স্ক লোক দরজা খুলে দিলেন। অসময়ে অপরিচিত মানুষ দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন গৃহকর্তা। আগন্তুক বিস্তারিত জানিয়ে লোকটির কাছ থেকে সহযোগিতা চাইলেন। অতি বিনয়ের সঙ্গে গৃহকর্তা তাদের ভেতরে এসে বসতে বললেন। কুঁড়েঘরে আরো ছিলেন লোকটির বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়ে।

আগন্তুক গৃহকর্তাকে হোটেলের কার্ড দেখিয়ে যাওয়ার উপায় জানতে চাইলেন। অন্ধকারে পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা রাস্তায় কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হোটেলে যাওয়া এই মুহূর্তে নিরাপদ নয় বললেন গৃহকর্তা। রোমানিয়ান দম্পতি মহা পেরেশানিতে পড়ে গেলেন। গৃহকর্তা তাদেরকে কুঁড়েঘরে রাত যাপনের জন্য বিনীত অনুরোধ করলেন। গরিব লোকটি আগন্তুকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা এবং ঘুমানোর জন্য সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব ভালো ব্যবস্থা করলেন।

সকালে ঘুম থেকে উঠে রোমানিয়ান দম্পতি দেখেন, কুঁড়েঘরে একটি মাত্র রুম যাতে তারা ছিলেন।

‘তাহলে ৫ সদস্যের পরিবারটি গেলেন কোথায়’ আগন্তুকদের মনে প্রশ্ন জাগে। তারা কুঁড়েঘরের আশে-পাশে খুঁজতে লাগলেন। একপর্যায়ে রোমানিয়ান স্বামী-স্ত্রীর দেখেন, দূরে একটি গাছের গোঁড়ায় কারা যেন শুয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখেন, গরিব লোকটি বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে জবুথবু হয়ে শুয়ে আছে

সারারাত এখানেই ছিলেন? গৃহকর্তার কাছে আগন্তুকের প্রশ্ন।

হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লেন তিনি। আর কোথাও থাকার জায়গা নাই বলে এখানেই ছিলেন, জানালেন লোকটি।

খ্রিস্টান দম্পতির চোখে-মুখে রাজ্যের বিস্ময়। স্বামী-স্ত্রী কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। রাজ্যের নীরবতা যেন গ্রাস করেছে চারিদিক। কেন আমাদের জন্য সব ছেড়ে দিয়ে কনকনে ঠাণ্ডায়, বরফে ঢাকা গাছের গোঁড়ায় আশ্রয় নিলেন? আমরা তো আপনাদের আত্মীয় কিংবা পাড়া-প্রতিবেশী না। এমনকি আপনাদের ইসলাম ধর্মের অনুসারীও না। তাহলে কেন এই অসামান্য ত্যাগ স্বীকার করলেন?

লোকটির ঝটপট উত্তর, পবিত্র গ্রন্থ কোরআন মাজীদে মহান আল্লাহ বলেছেন, মানুষের সেবা করতে এবং কেউ বিপদে পড়লে সাহায্য করার জন্য কোরআনে বার বার বলা হয়েছে। আমরা আল্লাহর আদেশ পালন করেছি মাত্র।
রোমানিয়ান দম্পতির চোখে পানি। কৃতজ্ঞতায় তাদের বুক ভরে গেল। কৌতূহলী হয়ে তারা জানতে চাইলেন, কোরআন মাজীদে আর কি কি আছে?

আমি মূর্খ মানুষ। খুব বেশি জানিনা। আপনারা কোরআন কিনে পড়ে জেনে নিতে পারেন। লোকটির সরল স্বীকারোক্তি। রোমানিয়ান দম্পতি তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেলে যাওয়ার আগেই লাইব্রেরীতে গিয়ে কোরআন সংগ্রহ করলেন। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় অল্প ক’দিনে তারা পবিত্র কোরআন পড়া শেষ করলেন।

সৌদি আরবের ‘হুদা’ চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে রোমানিয়ান দম্পতি বলেন, ‘কোরআনের প্রতিটি পাতা পড়া শেষে মনের মধ্যে এক অন্যরকম আবহ তৈরি হতো। সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিজের অজান্তে মাথা নুয়ে পড়ত। ভাবতাম, কতই না ভুলের মধ্যে ছিলাম এতদিন! এ এক অনন্য অনুভূতি ছিল, যা বলে বোঝানোর ভাষা নাই। প্রতিটি সূরা শেষ করে আকাশের দিকে তাকাতাম আর সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজতাম! কান্নায় বুক ভেসে যেত। তবুও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম আকাশ পানে।’

কোরআন পড়া শেষে কালক্ষেপণ না করে স্বামী-স্ত্রী ইসলাম গ্রহণ করেন। তারা বলেন, কোরআনের মর্মবাণী যারাই উপলব্ধি করবেন, সে যেই হোক তার চেতনায় পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।

রোমানিয়ায় ফিরে গিয়ে তারা একটি ইসলামিক সেন্টার খোলেন। পরিচিত, অপরিচিতদের মাঝে পবিত্র কোরআনের বাণী পৌঁছে দেবার ব্রতে স্বামী-স্ত্রী মানুষের দোরগোড়ায় গেলেন। ব্যাপক সাড়া পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে ইসলামিক সেন্টারের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে লাগলেন। তাদের অল্প কয়েকদিনের প্রচারণায় প্রায় চার হাজার রোমানিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন।

পাদটিকাঃ একটি দরিদ্র পরিবারের এক রাতের ত্যাগের বিনিময়ে কেবল একটি দম্পতি ইসলাম গ্রহণ করেননি, হাজার হাজার রোমানিয়ান মুসলমান হয়েছেন। এটাই নবীজি (ছা.)-এর শিক্ষা। আসুন, আমরা কোরআন বুঝে পড়ি। কোরআনের মর্মার্থ অনুধাবনের চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ এবং রাসূল (ছা.)-এর নির্দেশনা মেনে জীবন পরিচালিত করি এবং মানুষের সেবা করি; সবধরনের ভণ্ডামি পরিহার করি। সত্যিকারের ঈমানদার হই। তাহলে ঐ গরিব লোকটির মতো আমরাও কামিয়াব হবো ইনশাআল্লাহ। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

[সৌদি আরবের ‘হুদা’ চ্যানেলে দেয়া ওই রোমানিয়ান দম্পতির সাক্ষাৎকারের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো]

→তাকবির….. আল্লাহু আকবার !!সংগ্রীহিত

সূত্র

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member