ফেসবুক_কি_কোন_ধর্মীয়_প্রতিষ্ঠান

প্রশ্নঃ আপনি ফেসবুকে শুধু ধর্ম নিয়ে লেখেন কেন?

#ফেসবুক_কি_কোন_ধর্মীয়_প্রতিষ্ঠান?

উত্তরঃ খুব সুন্দর প্রশ্ন। এক-দু কথায় তো জবাব দেওয়া যায় না, একটু ব্যাখ্যা করেই উত্তর দেই।

প্রথম কথা হল, ফেসবুকে একটা মানুষকে অবশ্যই চেনা যায় না। তবে সেটা কোথায়ই বা চেনা যায় বলুন। কেউ হয়তো ফেসবুকে নিতান্ত ভালোমানুষ, বাস্তবে নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। আবার উল্টোটাও আছে। কেউ হয়তো বাইরের দুনিয়ায় নিপাট ভদ্রলোক, ফেসবুকে এসে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। যেহেতু উভয়দিক থেকেই কথাটা সত্য, তাই ফেসবুক আর বাস্তব জীবনের তুলনা করে কিছু মন্তব্য করাটাই নিষ্প্রয়োজন।

তবে ফেসবুকে একটা মানুষের কিছুই যে বোঝা যায় না তা কিন্তু না। একটা মানুষ কী চিন্তা করে, কীভাবে চিন্তা করে, কীসেকে গুরুত্ব দেয়, তার পয়েন্ট অব ফোকাস কী, দৃষ্টিভঙ্গি কী- এসব সম্পর্কে কিন্তু ফেসবুক প্রোফাইল একটা মোটামুটি ধারণা দেয়। তারপর সে কী কী পেজে লাইক দিয়েছে, কাদের ফলো করে- এগুলো থেকেও কিন্তু অনেক কিছু বোঝা যায়।

ধরুন কেউ ফুটবল খুব পছন্দ করে। দেখা যায় তার প্রোফাইল পিকচার হয় মেসি কিংবা রোনালডোর ছবি। কভার ফটো হয়তো প্রিয় দলের শিরোপা হাতে ছবি। প্রোফাইলে বিভিন্ন ফুটবলকেন্দ্রিক পোস্ট শেয়ার। এ থেকে বোঝা যায় ফুটবল তার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এখন আমরা কিন্তু তাকে প্রশ্ন করি না- ‘ফেসবুক কি খেলার মাঠ? সারাক্ষণ কেন ফুটবলের জিনিসপাতি?’

তেমনি কেউ হয়তো মুভি লাভার, তার টাইমলাইনে দেখবেন মুভি নিয়ে একের পর পোস্ট। কোনটা মুভির রিভিউ, কোনটা হয়তো ওয়াচিং অমুক মুভি পোস্ট। তাকে আমরা বলি না ফেসবুক কি থিয়েটার কি না। আবার কেউ ছবি আঁকতে ভালোবাসে। তার টাইমলাইন জুড়ে থাকবে নানা ভঙ্গির স্কেচ, পোর্ট্রেট ইত্যাদি। আমরা তাকেও প্রশ্ন করি না- ‘ফেসবুক কি আর্ট গ্যালারি?’ কেবল ধর্মীয় পোস্টদাতার ব্যাপারে এসে কেন এমন প্রশ্ন তৈরী হচ্ছে?

শুধু ফুটবল, মুভি বা আর্ট নয়, ব্যাপারটা আদর্শিক ব্যাকগ্রাউন্ডের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য। যে ছাত্রলীগ করে, তার টাইমলাইন জুড়ে আওয়ামী লীগ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আবার যে কমিউনিস্ট, তার টাইমলাইনে মার্কস, লেনিন, চে রা থাকবে- এটা মানতেও আমাদের কোন সমস্যা হয় না।

আসলে ব্যাপারটা এনটায়ারলি নির্ভর করে আপনি কোন জিনিসকে কেমন গুরুত্ব দেন। বেশিরভাগ মানুষের ফেসবুক প্রোফাইলে ফুটবল তারকা, হলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রী, গায়ক, বাদক, খেলুড়ে আর সেলফির আধিপত্য; কারণ এই জিনিসগুলো তাদের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের বাস্তব জীবনেও এদের প্রভাবই বেশি। অন্যদিকে আমার কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম বেশি গুরুত্বপূর্ণ, ফলে আমার টাইমলাইনে তাঁদের কথা বা শিক্ষাই বেশি আসে। এটা তো খুব সহজ কথা, তাই না?

দ্বিতীয়ত, “কেবল ধর্ম নিয়ে পোস্ট দেন”- বলে আপনি যেমনটা বোঝাচ্ছেন ব্যাপারটা আসলে তেমন নয়। আপনি যদি খেয়াল করেন তবে দেখবেন আমার বেশিরভাগ পোস্টের মূল ফোকাস ইসলাম হলেও পোস্টগুলো সাবজেক্টিভভাবে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ইতিহাসভিত্তিক ইত্যাদি নানাপ্রকারে ক্যাটাগরাইজ করা সম্ভব। আর এটাই স্বাভাবিক, কারণ ইসলাম এমন একটা জীবনবিধানের নাম যেখানে জীবনের সকল ক্ষেত্রের শিক্ষা, আদর্শ আর দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। ইসলাম কেবল কতগুলো রিচুয়ালের সমষ্টি নয়, বরং অনেক জীবনঘনিষ্ঠ প্র্যাক্টিক্যাল আদর্শ। দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় লেভেল পর্যন্ত যার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে তাকে আমরা কেন সর্বত্র নিয়ে আসব না?

“ফেসবুক কি কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান?”- প্রশ্নের এ অংশটুকু নির্দেশ করছে ধর্মকে আমরা কোন দৃষ্টিতে দেখি। আমাদের ধারণা ধর্ম কেবল উপাসনালয়ে থাকবে, এর বাইরে আমাদের জীবনে ধর্মের কোন ভূমিকা নেই। এ ধারণাটা অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে যৌক্তিক হয়ে থাকলেও থাকতে পারে, ইসলামের ক্ষেত্রে একেবারেই নয়। কারণ স্বয়ং আল্লাহ্‌ই ঘোষণা করেছেন ইসলামকে তিনি পাঠিয়েছেন সকল ক্ষেত্রে বিজয়ী করার জন্য। কেবল মসজিদে সীমাবদ্ধ থাকার জন্য হলে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এত সংগ্রাম করতে হত না, এত রক্ত ঝরাতে হত না। আজ আমরা দ্বীনের জন্য সেই সংগ্রাম তো দূরে থাক, মসজিদের বাইরে ধর্মের কথা শুনলেই বিরক্ত হচ্ছি।

বিষয় হচ্ছে আপনি যদি কোনখানে ধর্ম না আনেন তো অধর্ম এসে পড়বে। ইসলামের শিক্ষা না আনেন তো শয়তানের শিক্ষা এসে পড়বে। তাই কেবল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নয় বরং জীবনের সর্বত্র ইসলামের কথা আসবে, আসাটাই জরুরি। আর ফেসবুক তো সেই জীবনের একটা অংশই, তাই নয় কি?

তৃতীয়ত, আমাদের সমাজে ভালো কথা বলা ও শোনার লোকের খুব অভাব। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অশ্লীলতা, অনৈতিকতা, জালিয়াতি, মিথ্যা আর স্বার্থপরতা ঢুকে গেছে। এগুলোকেই সর্বত্র প্রমোট করা হচ্ছে, ফেসবুকও ব্যতিক্রম নয়। গালাগালি, বিদ্বেষ ছড়ানো, পরচর্চা আর মিথাচারের ভীড়ে আমি যদি দুটো ভালো কথা বলি, ক্ষতি কী? হয়তো আমার এই সামান্য কথাগুলো কাউকে অনুপ্রাণিত করছে, কাউকে জীবনের নতুন সংজ্ঞা শেখাচ্ছে, কাউকে স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করছে। আর যদি কোন লাভ নাও হয়, তবু অন্তত আমার মন্দ কথা বা কাজের অনিষ্ট থেকে তো অন্যরা বেঁচে যাচ্ছে, এটাই বা কম কী?

হাদীস থেকে আমরা জেনেছি কেউ যদি কাউকে ভালো কিছু করতে উৎসাহ দেয়, বা ভালো কিছু শেখায়, এবং তার ফলে সে ভালো কাজ করে, তবে এই ভালো কাজের যে সওয়াব হবে, তা যে করেছে তার পাশাপাশি যে তাকে উৎসাহ দিল বা শেখাল সেও পাবে। এই হাদীস আমাদের জন্য অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ী। আমি যদি কোন ভালো কথা বলি, তাতে প্রভাবিত হয়ে কেউ অন্যায় ছেড়ে দেয়, বা ভালো কাজ শুরু করে তবে তার পূর্ণ সওয়াব আমার আমলনামায় লেখা হবে। এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করার বোকামী কেন করব ভাই?

তাছাড়া ফেসবুকের পোস্টগুলো তো কেবল অন্যের জন্য না, নিজের জন্যও। দুনিয়ার নানা ব্যস্ততায় স্রষ্টাকে ভুলে গিয়ে ফেসবুকে ঢুকলে নিউজফিড বা টাইমলাইনের লেখাগুলো চোখে পড়লে অন্তত আল্লাহ্‌র কথা স্মরণ হয়। এইসব লেখালেখি আসলে রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করে, আর সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ফেসবুকের মত এতবড় একটা প্ল্যাটফর্মকে যদি আমরা উত্তম পথে কাজে লাগাতে পারি, তবে দিনশেষে আমাদেরই লাভ, তাই না?

__________

#জনৈক_ভাই

Original Source

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88