বিজ্ঞান ও কুরআনে মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর

কুরআন শরীফ মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর নিয়ে আলোচনা করেছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:

অর্থাৎ, আর আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির সারাংশ থেকে। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরুপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তে পরিণত করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে একটি নতুনরুপে দাড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টি কর্তা কতই না কল্যাণময়। (সূরা মু’মিনুন: ১২-১৪)

আরবী ” الْعَلَقَةَ ” (আলাকা) শব্দের তিনটি অর্থ রয়েছে।
১. জোক
২. সংযুক্ত জিনিস
৩. রক্তপিন্ড

আমরা যদি জোককে গর্ভস্থ সন্তানের সাথে মেলাতে যাই তাহলে,আমরা দু’টির মধ্যে সামঞ্জস্য দেখতে পাই। নিচের ১ নং ছবিতে সেটা স্পষ্ট। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি-মুর ও পারসাউড, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৮) এ অবস্থায় জোক যেমন অন্যের রক্ত খায় তেমনি উক্ত ভ্রুন তার মায়ের রক্ত খেয়ে বেচে থাকে। (কুরআন-হাদীসের আলোকে মানব দেহের প্রবৃদ্ধি –মুর ও অন্যান্য পৃষ্ঠা-৩৬)

দ্বিতীয় অর্থের আলোকে আমরা যদি তাকে “সংযুক্ত জিনিস” অর্থে নিই তাহলে দেখতে পাই যে,গর্ভস্থ ভ্রুন মায়ের গর্ভের সাথে লেপ্টে আছে। (২নং ও ৩ নং চিত্র দ্রষ্টব্য)

তৃতীয় অর্থের আলোকে আমরা উক্ত শব্দের “রক্তপিন্ড” অর্থ গ্রহণ করলে দেখতে পাব যে, তার বাহ্যিক অবস্থা ও তার সংরক্ষিত খাচা (আবরণ) রক্ত পিন্ডের মতই দেখায়। উক্ত অবস্থায় এখানে প্রচুর পরিমাণ রক্ত বর্তমান থাকে।(কুরআন-হাদীসের আলোকে মানব দেহের প্রবৃদ্ধি –মুর ও অন্যান্য পৃষ্ঠা-৩৭ ও ৩৮) (৪র্থ চিত্র দ্রষ্টব্য)

এতদসত্বেও তিন সপ্তাহ পর্যন্ত এই রক্ত সঞ্চালিত হয় না। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি-মুর ও পারসাউড, ৫ম সংস্করণ,পৃষ্ঠা-৬৫) সুতরাং, বলা যায়- এ অবস্থা রক্তপিন্ডের মতই।
চিত্র-১
1
চিত্রে জোক ও মানব ভ্রুনকে একই রকম দেখা যাচ্ছে।

(জোকের ছবিটি কুরআন-হাদীসের আলোকে মানব দেহের প্রবৃদ্ধি –মুর ও অন্যান্য, গ্রন্থের ৩৭ নং পৃষ্ঠা থেকে নেয়া হয়েছে যা হিলমান ও অন্যান্যদের প্রণিত “পুর্ণাংগ মৌলিক জীব” গ্রন্থ থেকে সংশোধিত হয়েছে এবং মানব দেহের চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, ৭৩ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)

চিত্র-২

2
এই চিত্রে দেখা যাচ্ছে উক্ত ভ্রুনটি মায়ের গর্ভের সাথে লেপ্টে রয়েছে। (চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, ৬৬ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)

চিত্র-৩

3
এ চিত্রে দেখা যাচ্ছে B চিহ্নিত ভ্রুনটি মাতৃগর্ভে লেপ্টে আছে। এর বয়স মাত্র ১৫ দিন। আয়তন-০.৬ মি.মি. (চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৩য় সংস্করণ, ৬৬ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে যা সংকলিত হয়েছে লেসন এন্ড লেসনের হিস্টোলজী গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে)

চিত্র-৪

4
এই চিত্রে দেখা যাচ্ছে ভ্রুন ও তার আবরণকে প্রচুর রক্ত থাকার কারণে রক্ত পিন্ডের মতই দেখাচ্ছে। (চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, ৬৫ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)

উক্ত “আলাকা” শব্দের তিনটি অর্থের সাথেই ভ্রুনের বিভিন্ন স্তরের গুণাবলী হুবহু মিলে যাচ্ছে।

কুরআন শরীফের আয়াতে উল্লেখিত ভ্রুনের ২য় স্তর হল-” مُضْغَةً” (মুদগাহ)। مُضْغَةً হল চর্বিত দ্রব্য। যদি কেউ ১ টুকরা লোবান নিয়ে দাতে চর্বন করার পর তাকে ভ্রুনের সাথে তুলনা করতে যায় তাহলে, দেখতে পাবে দাতে চর্বন করার পর উক্ত দ্রব্য যেমন দেখায় সেটার সাথে ভ্রুনের হুবহু মিল রয়েছে। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৮) (৫ ও ৬ নং চিত্র দ্রষ্টব্য)

আজ বিজ্ঞানীরা মাইক্রোস্কোপসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে এগুলো আবিস্কার করেছে কুরআন নাযিল হওয়ার দেড় হাজার বছর পর। তাহলে, এত কিছু জানা মুহাম্মদ(সাঃ)এর জন্য কেমন করে সম্ভব ঐ সময়ে যখন এ সবের কিছুই আবিস্কৃত হয়নি?

চিত্র-৫

5
এই চিত্রটি ২৮ দিন বয়সের (মুদগাহ স্তরের) ভ্রুনের চিত্র। উক্ত চিত্রটি দাত দ্বারা চর্বিত লোবানের মতই দেখাচ্ছে।(চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, ৭২ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)
চিত্র-৬

6
চিত্রে চর্বিত লোবান ও ভ্রুনের চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। আমরা উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য দেখতে পাই।উপরের চিত্র A তে আমরা ভ্রুনের গায়ে দাতের মত চিহ্ন এবং চিত্র B তে চর্বিত লোবান দেখতে পাচ্ছি।

১৬৭৭ খৃষ্টাব্দে হাম ও লিউয়েনহোক নামক দুই বিজ্ঞানী মাইক্রোস্কোপ দিয়ে মানুষের বীর্যের মধ্যে জীবনের অস্তিত্ব (Spermatozoma) খুজে পান রাসুল(সাঃ) এর যুগের এক সহস্রাধিক বছর পর। এ দুইজন বিজ্ঞানীই আগে ভূলক্রমে বিশ্বাস করেছিলেন যে, মানুষের বীর্যের মধ্যে উক্ত কোষের রয়েছে অতি সামান্য প্রক্রিয়া। নারীর ডিম্বানুতে আসার পর তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি-মুর ও পারসাউড, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৯)

আর প্রফেসর কেইথ এল. মুর বিশ্বের একজন প্রসিদ্ধ ভ্রুন বিজ্ঞানী এবং “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি” গ্রন্থের লেখক;যা বিশ্বের আটটি ভাষায় ছাপা হয়েছে।এটা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বই।এ বইটি আমেরিকার বিশিষ্ট্য একটি গবেষণা বোর্ড কর্তৃক কোন একক লেখকের শ্রেষ্ঠ বই হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

কেইথ এল.মুর হচ্ছেন কানাডার টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরবিদ্যা ও কোষ বিভাগের প্রফসর।তিনি ওখানে মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্টের অধীনে মৌলিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী ডীন হিসেবে এবং আট বছর শরীরবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৮৪ সালে তিনি কানাডায় শরীরবিদ্যা বিভাগের উপর কৃতিত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রাখার জন্য কানাডার শরীরবিদ্যা বোর্ডের পক্ষ থেকে J.C.B পুরস্কার পেয়েছিলেন।এছাড়া তিনি “কানাডিয়ান এন্ড এমেরিকান এসোসিয়শন এবং দি কাউন্সিল অফ দি ইউনিয়ন অফ বাইয়োলজিকাল সাইন্স” সহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থায় দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৮১ সালে সউদীর দাম্মামে অনুষ্ঠিত এক মেডিক্যাল সেমিনারে তিনি বলেন:আমার জন্য এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল যে, আমি মানব শরীরের প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে ভালোভাবে জানতে কুরআন শরীফের সহায়তা নিতাম।আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে,এ বিষয়গুলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুহাম্মদ (সাঃ)এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।কেননা,এ সকল বিষয়ের প্রায় সব কিছুই তার ইন্তেকালের কয়েকশত বছর পর আবিষ্কৃত হয়েছে।এ ব্যাপারটি প্রমাণ করে যে, মুহাম্মদ (সাঃ)আল্লাহ তায়ালার সত্য নবী।(“হাজিহী হিয়াল হাকিকাহ তথা এটাই সত্য” নামক ভিডিও ডকুমেন্টারী থেকে সংগৃহীত)

এ সময় তাকে প্রশ্ন করা হল- তাহলে কি এর অর্থ দাঁড়ায়-কুরআন আল্লাহ তায়ালার বাণী? তিনি জবাব দিলেন:”আমি এ কথা মেনে নিতে কুন্ঠাবোধ করি না।”

প্রফেসর মুর একটি কনফারেন্সে বলেছিলেন:”কুরআন ও হাদীসে মানবভ্রুনের বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার সময়কার বিভিন্ন স্তরকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিভিন্ন নামে ভাগ করেছে।”এর পদ্ধতিগুলো অত্যন্ত চমৎকার ও বিস্তৃত অর্থ নির্দেশ করে থাকে।যা আধুনিক শরীর বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের সাথে সংগতিপূর্ণ।বিগত চার বছরে সপ্তম শতাব্দীতে নাযিলকৃত কুরআন ও হাদীসের আলোকে মানবভ্রুন নিয়ে গবেষণা করে বিস্ময়কর ফলাফল পাওয়া গেছে।

এরিস্টোটল ভ্রুন বিদ্যার জনক হওয়া সত্বেও খৃষ্টপুর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে মুরগীর ডিমের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেন যে,মুরগীর বাচ্চার সৃষ্টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় কয়েকটি স্তরে।তবে, তিনি স্তরগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত কিছুই জানাতে পারেন নি।ধরে নেয়া যায় যে,কুরআন নাযিলের সময় খুব কমই জানা ছিল ভ্রুনের স্তরগুলো সম্বন্ধে;যা সপ্তম শতাব্দীতে বিজ্ঞানের কোন কিছুর উপর নির্ভর করে তা জানার সুযোগ ছিল না।

এখানে এসে শুধু একটি মাত্র নির্ভরযোগ্য ফলাফলে আসা যায় যে, এসমস্ত জ্ঞান মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে এসেছে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। কারণ, তিনি ছিলেন নিরক্ষর তার এগুলো জানার কথা ছিল না। এছাড়া অন্য কোথাও থেকে তার মত নিরক্ষর লোককে যে ট্রেনিং দেয়া হবে তাও ছিল অসম্ভব। (ভিডিও ডকুমেন্টারী “হাজিজি হিয়াল হাকীকাত” থেকে)

অনুবাদ : মুহাম্মদ ইসমাইল জাবীহুল্লাহ

সম্পাদনা : মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক

উৎসঃ  সরলপথ

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member