অপসংস্কৃতির অনুসরণ!

আজকাল রাস্তায় এমন আকৃতি-প্রকৃতির কিছু মানুষ দেখা যায় যারা ছেলে না মেয়ে বুঝা কঠিন। ছেলেরা টাখনুর নীচে কাপড় পরে। কানে দুল, হাতে চুড়ি, গলায় চেন দিয়ে ঘাড় পর্যন্ত চুল রেখে চলে। এখন ছেলেরা হাতে বালা পরে মেয়ে সাজতে চায়। অপরদিকে মহিলারা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট/সালোয়ার পরে। শালীন জামা-কাপড় পরা বাদ দিয়ে পরে শার্ট, গেঞ্জি, টি-শার্ট ইত্যাদি।

অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,ثَلاَثَةٌ لاَ يَنْظُرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ وَالدَّيُّوثُ ‘তিন ব্যক্তির দিকে আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। ১. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ২. পুরুষের বেশ ধারণকারিণী মহিলা এবং ৩. নিজ বাড়ীতে অশ্লীলতার সুযোগ দানকারী পুরুষ’।[নাসাঈ হা/২৫৬২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৭৩-৭৪।]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মেয়েদের সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে যেতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,كُلُّ عَيْنٍ زَانِيَةٌ وَالْمَرْأَةُ إِذَا اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ بِالْمَجْلِسِ فَهِىَ زَانِيَةً. ‘প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচার করে থাকে। আর মহিলা যদি সুগন্ধ ব্যবহার করে কোন (পুরুষদের) মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, তবে সে ব্যভিচারিনী’।[আবু দাঊদ, তিরমিযী হা/২৭৮৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৫৪০।]

চুলের ভ্যারাইটি ছেলেমেয়ে সবার ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। এখন ছেলেরা চুল রাখে নারিন কাটিং, স্পাইক, রোনাল্ডো কাটিং, পার্নেল কাটিং, সিনা কাটিং, বাটি কাটিং, ডন কাটিং, তেরে নাম কাটিং, লিওনেল কাটিং, দিলওয়ালে কাটিং ইত্যাদি। কারো চুল পিছনে আধ হাত পরিমাণ লম্বা আবার কারো সামনে লম্বা। এসবই বর্জনীয়।

এবার আসি দাড়ি প্রসঙ্গে। একজন পুরুষকে চেনার আলামত হ’ল দাড়ি। দাড়ি কাট-ছাট না করে ছেড়ে দেয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাত। কিন্তু একেকজনের দাড়ি একেক স্টাইলের। যেমন- খামচি কাটিং, চুটকি কাটিং, রুমি কাটিং, ডন কাটিং, কাপুর কাট, ফ্রেঞ্চ কাট, চখরা-বখরা কাট ইত্যাদি। কারো আবার ইসলামের বিপরীত ভ্যারাইটি মোচ। রাখোড়, ধাওয়ান, দাবাং ইত্যাদি স্টাইলের মোচ এখন সবার পসন্দ। কিন্তু নবী করীম (ছাঃ) বলেন,

جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللُّحَى خَالِفُوا الْمَجُوْسَ ‘গোফ ছেটে দাড়ি লম্বা করে অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর’।[মুসলিম হা/২৬০।]

বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ করে মুসলমানরা দিন দিন ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। স্কুল-কলেজ এমনকি অনেক মাদরাসার শিক্ষকদের জন্যও দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো হচ্ছে, যা বিজাতীয় আচরণ। কোন মুসলিমের জন্য এটি বৈধ নয়।[মুসলিম হা/৪১৩।]

বিজাতিদের অনুকরণে পোষাক পরা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-কে হলুদ রঙের দু’টি কাপড় পরে থাকতে দেখে বললেন, إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ فَلاَ تَلْبَسْهَا ‘এ ধরনের কাপড় কাফেরদের, তুমি তা পরিধান করো না’।[মুসলিম হা/২০৭৭; মুসনাদে আহমাদ ২/১৬২।]

অন্যদের অনুকরণ সম্পর্কে মহানবী (ছাঃ) বলেন, لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا ‘যে ব্যক্তি আমাদের ছেড়ে অন্যের অনুকরণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়’।[তিরমিযী হা/২৬৯৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২১৯৪।]

কোন মুসলিমের উচিত নয় কোন বেদ্বীন কাফের-মুশরিকের অনুসরণ করা। কেননা যে ব্যক্তি যে দলের সাথে সাদৃশ্য রাখবে ক্বিয়ামতের দিন সে তাদের দলভুক্ত হবে।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত’।[আবু দাউদ হা/৪০৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৪৯; মিশকাত হা/৪৩৪৭।] তাই প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হ’ল সে রাসূল (ছাঃ)-এর পথ অনুসরণ করবে ও পবিত্র কুরআন-ছহীহ হাদীছ মেনে চলবে।

অতএব আসুন, আমরা যাবতীয় পাপ কাজ তথা শিরক-বিদ‘আত ও বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ ছেড়ে দিয়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ মোতাবেক আমল করি। অবনতমস্তকে অহি-র বিধান মেনে নেই। আর আল্লাহর কাছে দো‘আ করি- يَا حَىُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ ‘হে চিরঞ্জীব! হে বিশ্বচরাচরের ধারক! আমি আপনার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।[ তিরমিযী হা/৩৫২৪, সনদ হাসান; মিশকাত হা/২৪৫৪।] আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের উপরে অটল থাকার তাওফীক দিন-আমীন!।

Source

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88