সূরা ‘দুখান’-এ উল্লেখিত বিশেষ রাত্রি দ্বারা উদ্দেশ্য কী?

প্রশ্ন: শাবান মাসের ১৫ তারিখের গুরুত্বটা কী? এটা কি সেই রাত যে রাতে প্রত্যেক ব্যক্তির আগামী বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হয়? সূরা ‘দুখানে’ উদ্ধৃত বিশেষ রাত কোনটি? সেই রাতটা কি শাবান মাসের ঐ রাত; নাকি লাইলাতুল ক্বদর?

উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।

অর্ধ শাবানের রাত অন্য রাতগুলোর মতোই। এ রাত সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ মর্মে এমন কোন কিছু সাব্যস্ত হয়নি যা প্রমাণ করে যে, এ রাতে প্রত্যেক ব্যক্তির ভাগ্য ও পরিণতি নির্ধারিত হয়।

8907 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখা যেতে পারে।

আর আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী: “নিশ্চয় আমরা একে (এই কুরআন) নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমরা সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ নির্দেশ জারী করা হয়।”[সূরা দুখান, ৪৪:৩-৪] ইবনে জারির আত্‌তাবারী (রহঃ) বলেন: এ রাতটি বছরের কোন রাত তা নিয়ে তাফসিরকারগণ মতভেদ করেছেন। কেউ বলেছেন: সেটি লাইলাতুল ক্বদর। কাতাদা থেকে বর্ণিত আছে, সেটি লাইলাতুল ক্বদর। অন্য তাফসিরকারগণ বলেছেন: সেটি অর্ধ শাবানের রাত। তাবারী বলেন: এ ক্ষেত্রে সঠিক অভিমত হল যারা বলেছেন: সেটি লাইলাতুল ক্বদর।[তাফসিরে তাবারী (১১/২২১)]

আর আল্লাহ্‌ বাণী: “এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ নির্দেশ জারী করা হয়।”

সহিহ বুখারীতে এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন: অর্থ হচ্ছে— এ রাতে ঐ বছরের বিধানগুলো নির্ধারণ (তাকদীর) করা হয়। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: “এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ নির্দেশ জারী করা হয়”। ইমাম নববী বলেন: আলেমগণ বলেন, এ রাতকে লাইলাতুল ক্বদর বলা হয়, যেহেতু এ রাতে ফেরেশতারা তাকদীরগুলো লিপিবদ্ধ করেন। দলিল হল আল্লাহ্‌র বাণী: “এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ নির্দেশ জারী করা হয়”। এটি আব্দুর রাজ্জাক ও অন্যান্য তাফসিরকারগণ মুজাহিদ, ইকরিমা, কাতাদা প্রমুখ থেকে সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন। তুরবাশতি বলেন: قَدْر শব্দটি সাকিন দিয়ে উদ্ধৃত হয়েছে; যদিও বহুল প্রচলিত হচ্ছে- قضاء (নিয়তি) এর সমার্থক শব্দ قَدَر এর ‘দাল’ হরফে যবর দিয়ে পঠন; সেটা এ কারণে যে, এখানে এর দ্বারা তাকদীর (নির্ধারণ) উদ্দেশ্য নয়; বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে- পূর্বেই যা তাকদীর (নির্ধারণ) করা হয়েছে সেটার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া এবং ঐ বছরের জন্য সেটা প্রকাশ করা ও সীমাবদ্ধ করা; যাতে করে ঐ বছরের যতটুকু তাকদীর ততটুকু সে রাতে তাদের কাছে নাযিল হয়ে যায়।

লাইলাতুল ক্বদরের রয়েছে মহান মর্যাদা; যে ব্যক্তি ঐ রাতে নেক আমল করে ও আমল করার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করে তার জন্য।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “নিশ্চয় আমরা তা (কোরআন) লাইলাতুল ক্বাদর-এ (মর্যাদার রাতে) নাযিল করেছি। আপনি কি জানেন, লাইলাতুল ক্বাদর কি? (তার মর্যাদা কত?)। লাইলাতুল ক্বাদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তাতে (এ রাতে) ফেরেশতারা এবং জিবরাঈল তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে প্রতিটি নির্দেশ নিয়ে নেমে আসে। (সারারাত জুড়ে মুমিন বান্দাদের জন্য আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে বিরাজ করে) শান্তি; এ রাত (রাতের এই মর্যাদা) ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত থাকে।”[সূরা ক্বাদর, ৯৭:১-৫] এ রাতের মর্যাদার ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইমাম বুখারী (রহঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবপ্রাপ্তির আশা নিয়ে লাইলাতুল ক্বাদরে কিয়াম পালন করবে তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াব প্রাপ্তির আশা নিয়ে রমযানে সিয়াম পালন করবে তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”[সহিহ বুখারী, কিতাবুস সওম, (১৭৬৮)]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
—————
মুহাম্মদ নূরুল্লাহ্‌ তারীফ কর্তৃক ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব (ইসলাম কিউএ) ওয়েব সাইটের জন্য অনুদিত।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member